মাসুদ পারভেজ, কালিগঞ্জ : নানা বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কালিগঞ্জের নারী শিক্ষা। পিছিয়ে থাকা এ জনপদে কয়েক বছরের মধ্যে বেড়েছে নারী শিক্ষার হার। প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েরা শিক্ষায় আলোকিত হতে দূর-দূরান্ত থেকে সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। সে সাথে লড়ছে বাল্যবিবাহ ইভটিজিংসহ সমাজের নানা কুপ্রথার বিরুদ্ধেও।
নারীদের আধুনিক শিক্ষায় এগিয়ে নিতে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী ও উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল। লামিয়া, দরিদ্র সাইকেল মিস্ত্রি মিজানুর রহমানের মেয়ে। স্বপ্ন বড় হয়ে ডাক্তার হবে। ৮ম শ্রেণিতে পড়া কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের মেধাবী এ কিশোরী ৩ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে যাচ্ছে সাইকেল চালিয়ে। এ প্রসঙ্গে লামিয়া বলেন, প্রথমদিকে অনেকেই বাজে কথা বলত। বাবা এসব কথায় কান দিত না। বাবা শুধু বলত মন দিয়ে পড়ালেখা কর। শুধু লামিয়াই নয় সময়ের পালাবদলে উপজেলার পানিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সামাজিক বাধা ডিঙিয়ে এখন দল বেঁধে সাইকেলে যাতায়াত করছে এসব শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে নাচ গানে অংশগ্রহণ ছাড়াও লড়ছে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিংসহ সমাজের নানা কুপ্রথার বিরুদ্ধেও। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সাইকেল দিয়েই সবসময় স্কুলে আসি। সময় মত আসতে সুবিধা হয়। সামাজিক দৃষ্টির পরিবর্তন হওয়ায় ঝরে পড়া রোধসহ নারী শিক্ষা বেগবান হচ্ছে বলে জানান শিক্ষকরা। অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সাইকেল প্রদানসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে বলে জানায় উপজেলা চেয়ারম্যান।
উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল বলেন, দূরের যে সকল মেয়েরা স্কুলে আসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দলিত সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল সহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করব। কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে উপজেলার ৩৬ জন হতদরিদ্র মেধাবি শিক্ষার্থীদের মাঝে সাইকেল বিতরণ করেছি, চলিত অর্থবছরেও করা হবে।
তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে আছে। আমেরিকার মতো উন্নত দেশে কোনো নারী এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হতে পারেনি। সেদিক থেকে আমাদের বাংলাদেশ অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত নারীদের জাতির পিতা উদ্ধার করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন। তাদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। তারা যেন স্বনির্ভর হতে পারে সেজন্য তিনি কোটা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
স্বাধীনতার পর সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেন। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক করে দেন। আওয়ামীলীগ সরকার আজ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সরকার মেয়েদের শিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক করে দিয়েছেন। পাশপাশি মেয়েরা যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায় সেজন্য বিভিন্ন ধরনের স্টাইপেন্ড ও বৃত্তি সহায়তা দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে শতকরা ৭৫ ভাগ মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় সহায়তা দেয়া হয়।
মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার এরইমধ্যে অনেক আইন করেছে ও পদক্ষেপ নিয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম ক্ষমতায় এসে মাতৃত্বকালিন ছুটি ৩ মাস থেকে বাড়িয়ে ৪ মাস করে দেয়। এখন তা আরো বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। মায়েদের সামাজিক স্বীকৃতি হিসেবে সন্তানের পরিচয়পত্রে পিতার নামের পাশে মাতার নাম যুক্ত হয়েছে।