নগরঘাটায় ভূমি অফিসের গাছ অপসারণের নামে ৮০ হাজারে বিক্রি করলেন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা!

276
নগরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) সরকারি গাছ অপসারণের নাম করে শত বছরের গাছ বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।- লাল সবুজের কথা
নগরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) সরকারি গাছ অপসারণের নাম করে শত বছরের গাছ বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।- লাল সবুজের কথা

মো. জাবের হোসেন : গাছ অপসারণের নাম করে দেবদারু গাছের সাথে শত বছরের একটি কাঁঠাল গাছ এবং সাথে আরো কয়েকটি আম গাছের বড় বড় ডাল-পালা বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১ মার্চ) সকালে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে কিছুদিন পূর্বে নতুন উদ্বোধন হওয়া ভূমি অফিসের সামনে শতবর্ষী একটি কাঁঠাল গাছ গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) লোকচক্ষুর অন্তরালে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) শ্যামল কুমার অধিকারী কেঁটে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু কথা ছিলো দেবদারু গাছ অপসারণ করা, বিক্রি করা নয়।

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার অধিকারী দেবদারু গাছের সাথে শতবর্ষী কাঁঠাল গাছ এবং আম গাছের বড় বড় ডাল-পালা সহ মোট ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন।

এলাকাবাসী বলেছেন নগরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) শ্যামল কুমার অধিকারী অফিস বন্ধ থাকা কালিন সময়ে গাছ কেঁটেছে অফিস সহকারী শমসের এবং পিয়ন মাহফুজকে ব্যবহার করে। তাদের মাধ্যমে চুরি করে গাছ কেঁটে বিক্রি করে আবার সেই কাঁটা গাছের গোড়ায় সুন্দর করে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিয়েছেন, যাতে কেউ বুঝতে না পারেন সেখানে গাছ ছিলো।

শত বছরের কাঁঠাল গাছ, দেবদারু গাছ এবং আম গাছের ডাল বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার অধিকারী। তার কাছে সংবাদকর্মীরা বক্তব্য নিতে গেলে তিনি দরজা বন্ধ করে বলেন, আমার বক্তব্য নেওয়ার অনুমতি আছে আপনার কাছে? আমার বক্তব্য নিতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসেন। তাহলে বক্তব্য প্রদান করবো।
কিন্তু গাছটি অপসারণ করে তিনি কোথায় রেখেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোবাইলে তিনি জানান, শুধু জেনে রাখে যে গাছটি অপসারণ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবোনা। তবে গাছটি বিক্রি করেছেন কিনা, বা কোথাও রেখেছেন কিনা অথবা নষ্ট করে ফেলেছেন কিনা তিনি এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দিতে পারেন নি।

সিদ্দিক নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমরা আসি, তহশিল অফিসে এসে গাছটি দেখি। সেই গাছটি আজ এসে আর দেখছিনা। নায়েব সাহেবের কাছে গাছের বিষয়টি বলছি কিন্তু উনি অস্বীকার যেয়ে বলছেন গাছটি বিক্রি করিনি। তাহলে গাছটি কি হাওয়া হয়ে গেলো? শতবর্ষী কাঁঠাল গাছ কেনো বিক্রি করলো নায়েব? নায়েবের নায্য বিচার চাই আমরা।

এ ব্যাপারে তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস.এম তারেক সুলতান বলেন আমি বর্তমানে সাতক্ষীরার বাইরে প্রশিক্ষণে আছি বিগত দেড় মাস ধরে। বর্তমানে ইউএনও স্যার দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যাপারে ইউএনও’র কাছে শুনতে বলেন।

তবে এব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্যারের নির্দেশে দেবদারু গাছটি অপসারণ করা হয়েছে। এর বাইরে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কি করেছেন সেটি জানা নেই। তবে কোনোভাবেই ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে গাছ বিক্রি করার কোনো ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি বা অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার অধিকারী যদি গাছ বিক্রি করে থাকেন তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার অধিকারীর বিরুদ্ধে খাজনা আদায়, জমির নামজারি, জমির শ্রেণি পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণ চেক সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. তানজিল্লুর রহমানের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি জানান, কিছুদিন আগে আমি ওই ভূমি অফিসে গিয়েছিলাম। তবে গাছ কেঁটে বিক্রি করার কোনো বিষয়ে আমি জানিনা। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জেনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।