অাবুল কালাম,দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:নির্বাচনের বছরের শেষ রমজানকে ঘিরে কুমিল্লার দেবীদ্বারে ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাদের মধ্যে চলছে শক্তিপ্রদর্শণ। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা আওয়ামী লীগ’র দু’গ্রুপের মধ্যে পাল্টা পাল্টি ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে । ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, তবে নেতৃত্ব,- যার যার অবস্থানে থেকে শক্তিপ্রদর্শনে মরিয়া ছিল।
শনিবার ওই ইফতার পার্টিকে ঘিরে উপজেলা আ’লীগ’র বিবাদমান দু’গ্রুপের একাংশের উদ্যোগে দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়’র এবিএম গোলাম মোস্তফা ষ্ট্যাডিয়ামে এবং অপর অংশ উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন আ’লীগের ব্যানারে পদ্ধকোটে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ইফতার পার্টির আয়োজন করে।
আ’লীগ দু’গ্রুপের পাল্টা পাল্টি ইফতার পার্টির মধ্যদিয়ে আবারো এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিলো। দেবিদ্বার উপজেলা আ’লীগ’র আভ্যন্তরীন দ্বন্দের কারনে এবং যত ভোটার- তত কর্মী- তত নেতা হওয়ায় দলের চেইন অব কমান্টস ভেঙ্গে পড়ায়, গত ২২ বছরেও উপজেলা আ’লীগের নতুন কমিটির আলোরমুখ দেখেনি।
শনিবার উপজেলা আ’লীগের উদ্যোগে দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়’র এবিএম গোলাম মোস্তফা ষ্ট্যাডিয়ামে এবং অপর অংশ উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন আ’লীগের ব্যানারে পদ্ধকোটে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বেশী বিব্রত হতে হয়েছে। কারন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা উপর তলার নেতাদের কোন্দলের উর্ধ্ধে থাকার চেষ্টা করলেও একই দিনে দু’জায়গায় ইফতার মাহফিলে যোগদানে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হয়েছে। তার পরও উভয় গ্রুপের নেতৃবৃন্দরা যার যার ইফতার পার্টিকে শতভাগ সফল হিসেবে দাবী করেছেন।
শনিবার উপজেলা আ’লীগের উদ্যোগে দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়’র এবিএম গোলাম মোস্তফা ষ্ট্যাডিয়ামে অনুষ্ঠিত ইফতার পার্টিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সাধারন সম্পাদক মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান’র সঞ্চালনায় এবং আ’লীগ উপজেলা সভাপতি হাজী মোঃ জয়নুল আবেদীন’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন আ’লীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক উপ-মন্ত্রী এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবীন্দ্র চাকমা, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল বাশার ভূইয়া, জেলা সাব রেজিষ্টার(অবঃ) আলহাজ্ব আব্দুল করিম সরকার, সিপিবি কুমিল্লা জেলা সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, ন্যাপ দেবিদ্বার উপজেলা সভাপতি অনিল চক্রবতর্ত্থী, উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মাস্টার, ‘জুলিওকুড়ি বঙ্গবন্ধু’ পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল আউয়াল ভূঞা, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. একেএম গোলাম ফারুক।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, উপজেলা আ’লীগ’র সাবেক সাধারন সম্পাদক হাজী আব্দুল মতিন মূন্সী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’র সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সামাদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’র সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ রফিকুল ইসলাম, কুমিল্লা (উঃ) জেলা মহিলা আ’লীগ সভাপতি শিরিন সুলতানা, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি হাজী আবুল কাসেম ওমানী, সাধারন সম্পাদক আব্দুল মান্নান মোল্লা, মোরশেদ মোল্লা, রোজিনা আক্তার, ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরকার, মোঃ সোহরাব হোসেন, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সরকার, মোঃ কামরুল ইসলাম, খন্দকার এম,এ,সালাম, মোঃ খোরশেদ আলম, মোঃ সফিকুল ইসলাম, ছাত্রলীগ উত্তর জেলা সভাপতি আবু কাউছার অনিক। দোয়া পরিচালনা করেন ধামতীর আব্দুর হালিম পীর সাহেব, আরো উপস্থিত ছিলেন মানিক ফকির।
অপরদিকে উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন আ’লীগের ব্যানারে পদ্ধকোটে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ইফতার পার্টিতে আমরা মুক্তিযোদ্ধর সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি এডভোকেট নিজামুল হক, সহসভাপতি অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ, জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক রৌশন আলী মাস্টার, উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান একেএম সফিকুল আলম কামাল (ভিপি কামাল), জেলা আ’লীগের সদস্য ও ঢাকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, আব্দুল কাইয়ুম, মোঃ মিজানুর রহমান, মোঃ মাহবুব মূন্সী, নাঈমুর ইসলাম নায়েম, রকিবুল হাসান, কবির ইকবাল ছোটন খান প্রমূখ।
উপজেলা আ’লীগের সভাপতি হাজী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের কয়েকজন নেতা আজ মূল দলের বাহিরে গিয়ে নিজেরা কিছু করার চেষ্টার করছে। তবে দলে তাদের যে অবস্থান তারা কিছুই করতে পারবেনা। বর্তমান সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গিয়ে ওই সকল নেতারা নিজেরা কিছু করতে পারবেনা এবং তাদের দেওয়া পাল্টা পাল্টি কর্মসূচির কারনে দলেরও কোন প্রকার ক্ষতি হবেনা।
অপরদিকে উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন আ’লীগের ব্যানারে পদ্ধকোটে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে আয়োজিত ইফতার পার্টির অতিথি কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক রৌশন আলী মাস্টার বলেন, দেবিদ্বারে এখন উন্নয়নের নামে হরিলুট চলচ্ছে। সর্বত্র দুর্নীতি আর অনিয়মে ছেঁয়ে গেছে। কিছু নেতা আওয়ামীলীগের লেবাস পরিধান করে বিএনপি-জামায়াতের সাপোর্ট নিয়ে বেঁচে আছেন। বর্তমান সাংসদ রাজী ফখরুল দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে বিএনপি-জামায়াতের লোকদের অবমূল্যায়ন করছে। যার ফলে দলের ভিতরে আজ এত সমস্যা। তাদের কারনে ২২ বছরেও উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি হচ্ছেনা। ৫০ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে প্রতি মিটার থেকে ১০/১৫ হাজার টাকা করে আত্মসাৎ করেছে তার সমর্থীত নেতাকর্মীরা। তারা পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করছে দেবিদ্বারে ৫শত কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সত্য কথা হলো ৫০কোটি টাকার উন্নয়ন হয়নি এ উপজেলায়। চেয়ারম্যান নির্বাচনে নমিনেশন বানিজ্য ও দপ্তরী নিয়োগ বানিজ্য সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে বাবা-ছেলে। বাবা-ছেলের অপকর্মের দায় দায়িত্ব আওয়ামীলীগ নেবেনা। তাদের এসব অপকর্মের কারনে দলের ভাবমূর্তী আজ ক্ষুন্ন হয়েছে।
আ’লীগ উভয় গ্রুপের ইফতার পার্টিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। তবে বিগত ৯বছরে আ’লীগ দলের উদ্যোগে কোন অনুষ্ঠান এটাই প্রথম এবং সর্ববৃহৎ। উপজেলার পদ্মকোট গ্রামের রৌশন আলী মাষ্টার সহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে প্রায় ৩-৪ হাজার সমর্থক উপস্থিত ছিলেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। যাদের ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, মসজিদ, ঈদগাহ মাঠে জায়গা করা হয়েছে।
অপরদিকে দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়’র এবিএম গোলাম মোস্তফা ষ্ট্যাডিয়ামে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে পুরো মাঠ জুড়ে বিশাল প্যান্ডেল ভর্তি হয়ে, গ্যালারী এবং রেয়াজ উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কমপ্লেক্সে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপচেপড়া ভীড় পরিলক্ষিত হয়। উক্ত ইফতার মাহফিলে প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়িদের উপস্থিতি ছিল। যা দেবীদ্বারের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ইফতার পার্টি বলে ধারনা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার জনবান্ধব সরকার, এসরকারের আমলেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে সক্ষম হয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতার পক্ষের সকল প্রগতিশীল দলগুলোর সহযোগীতা নিয়ে এগিয়ে যাব। আগামী সংসদ নির্বাচনে দল যাকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সকলে কাজ করবেন। আমিও যদি মনোনয়ন না পাই, আ’লীগ থেকে যিনি মনোনয়ন পাবেন আমিও সে প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবো।