পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি ॥ তালা উপজেলা ছাত্রদলের আগামী রাজনীতি নিয়ে অশনি সংকেতের শঙ্কায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে তৃণমুল নেতৃবৃন্দের মাঝে। ছাত্ররাজনীতি যে কোনো দলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মনে করে কি হতে চলেছে আগামী দিনের তালা উপজেলা ছাত্রদলের কমিটিতে তা নিয়ে তৃণমুল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মাঝে তীব্র মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়, ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব উপলদ্ধি করে অতিদ্রুততম সময়ের মধ্যে তালা উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তালা উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি বিলূপ্তির পর দায়িত্বছাড়া হয়ে পড়ায় অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে ছাত্রদলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন নতুন কমিটি দেয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও বাস্তবত কোনো কমিটি দেয়া হয়নি। অবশেষে তালা উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ নড়েচড়ে বসতেই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কমিটি দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে তালা উপজেলার পরীক্ষিত ত্যাগী, নির্যাতিত, রাজনৈতিক মামলা হামলার শিকার নেতৃবৃন্দ দাবি করেন ছাত্রদলের রাজনীতি দলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এতে কমিটি গঠনে কোনো প্রকার ত্রুটি থাকলে আগামী দিনে মাশুল গুনতে হবে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের। তারা আরও মনে করেন, তালা উপজেলার রাজনীতিতে যারা বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে দলকে বেগবান করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন কেন্দ্রীয় ও জেলা রাজনীতিবিদদের উচিত তাদের কথার মুল্যায়ন করা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালা উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতোমধ্যে অবৈধ কালো আর বিদেশী টাকার কাছে নত হয়ে পকেট কমিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এখন শুধুমাত্র নাম প্রকাশের সময়টুকু বাকি।
তারা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি সিনিয়র নেতারা অবৈধ টাকার কাছে বিক্রি হয়ে সভাপতি হিসেবে হাফিজুর রহমান হাফিজকে এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রিজভী আহমেদকে মনোনীত করেছেন। কিন্তু এ কমিটি পাটকেলঘাটার রাজনীতিতে কেউ মেনে নেবে না এবং এর জন্য দলকে কঠিন মাশুল দিতে হবে। উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থীগণ সৈকত, রিপন, সোহেল, রাসেল, জিএম ফারুক, আবির হোসন, সালাম, আলামিন অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মতের বাইরে কমিটি দিলে তা আমরা কখনই মেনে নেব না।
আমরা জানতে পেরেছি মালেশিয়া ফারুকের কাছে অবৈধ কালো টাকায় বিক্রি হয়ে ইতোমধ্যে কমিটি তৈরী হয়ে আছে। তৃণমুল রাজনীতিবিদদের অবজ্ঞা করে সিনিয়র নেতারা কমিটি দিলে আমরা কঠিন হতে কঠোর হতে বাধ্য হবো। বিশেষত রিজভীকে কখনই আমরা মেনে নেব না। কারণ রিজভী শুধুমাত্র ফেসবুক রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ। নেই মামলা, হামলা, নির্যাতিত, কারাবরণকারীর মতো গুরুতর অভিযোগ। তাছাড়া অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে অবজ্ঞা করে একক রাজনীতিতে তার অবাধ চলাচল। অর্থের কাছে মাথা নত করে কমিটি দিলে তা কখনই মানা হবে না বলে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে সদ্য বিদায়ী তালা উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, কমিটি দেয়ার ব্যাপারে লোক মারফত শুনেছি। আমি চাই কালো টাকার বিনিময়ে যেন কেউ কমিটিতে আসতে না পারে এবং পরীক্ষিত ত্যাগী নির্যাতিতরাই যেন কমিটিতে ঠাই পাই। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান আনিচ বলেন, তালা উপজেলা ছাত্রদলের রাজনীতি বরাবরই প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছে।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতামত না নিয়ে পকেট কমিটি দিলে তা আমরা কখনই মেনে নেব না। প্রয়োজনে যে কোনো দুর্যোগে প্রতিহত করতে পাটকেলঘাটার নেতৃবৃন্দ বদ্ধ পরিকর। সরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাশেদুল হক রাজু বলেন, তালার প্রার্থী নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নাই। তবে পাটকেলঘাটা সদর হতে আবিরকে সম্পাদক করার প্রস্তাব দিয়েছি। কেননা আবির নির্যাতিত হয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। তার মতো কর্মঠ, চৌকস, ত্যাগীকে কমিটিতে আনলে দলের ভাবমুর্তি বাড়বে বলে মনে করি।
উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি আলী হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উচিত দলের এই কঠিন দুঃসময়ে অর্থের কাছে বিক্রি না হয়ে স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে নেশাহীন, নির্যাতিত ছেলেদের কমিটিতে আনা। তালা উপজেলা যুবদলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, কেন্দ্র হতে জানার পর স্থানীয় ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির তৃনমুল সকলকে নিয়ে মিটিং করেছিলাম।
সকলে সর্বসম্মতিক্রমে সরুলিয়া সদর হতে আবিরকে মনোনীত করেছে। আমাদের সকলের দাবি তাকেই সদস্য সচিবের পদে নিযুক্ত করা হোক। তবেই কোনো গ্রুপিংয়ের কিংবা দ্বিমত থাকবেনা বলে মনে করি। এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের সভপতি সজীব ও সম্পাদক চন্দনের মোবাইলে যোগাযোগে পাওয়া যায়নি।
তবে তালা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন বারংবার স্বজনপ্রীতি আর অবৈধ টাকার কাছে নত হয়ে আসছে বলে মনে করেন তালা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি শেখ গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি দিলে দলের জন্য আর্শিবাদ বয়ে আনবে ।