তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে স্টুলিশ

19
stulish

গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেজুড়ে আলোচনায় থাকা ‘সারাহা’ অ্যাপের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। এ বছর ভাইরাল হয়ে সারাহার স্থান দখল করে নিয়েছে ‘স্টুলিশ’ নামের বেনামি বার্তা দেখার এই অ্যাপ।

ভাইরাল হওয়া স্টুলিশ আইডির লিংক অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার দিচ্ছেন। শেয়ার করা লিংকে ক্লিক করে পরিচয় গোপন রেখে নাম প্রকাশ ছাড়াই ব্যবহারকারীর আইডিতে বার্তা পাঠাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ বেনামি বার্তাগুলোর স্ক্রিনশট ফেসবুকে শেয়ার করে মজা করছেন।

স্টুলিশ অ্যাপটির নির্মাতা এইচএলএন এন্টারটেইনমেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এটি ইতিমধ্যে ৫ লাখের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই অ্যাপটি কতটা নিরাপদ? সারাহার মতো এটিও সাইবার বুলিং করছে নাতো? ইতিমধ্যেই ‘স্টুলিশ’ অ্যাপের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংসহ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এমনকি ২৩ মে থেকে বাংলাদেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের স্ট্যাটাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের লোগো সংবলিত একটি স্ক্রিনশট ভেসে বেড়াতে দেখা গেছে। স্ক্রিনশটের তথ্য অনুযায়ী স্টুলিশ একটি হ্যাকিংঅ্যাপ এবং এটির মাধ্যমে দুই মিলিয়নের বেশি তথ্য হ্যাক হয়েছে।

অ্যাপটি ঘেঁটে কয়েকজন অ্যাপ ডেভেলপার এর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, স্টুলিশ যে সব তথ্য চেয়ে আবদার করে থাকে তা সন্দেহজনক। সন্দেহের মূলে দেখা যায় অ্যাপটি যে সব ইন্সটলেশনের সময় যে সব অনুমতি চেয়ে থাকে তা নিয়ে।

ইন্সটলেশনের এক পর্যায় দেখা যায়, ‘ডিভাইস আইডি অ্যান্ড কল ইনফরমেশনের অনুমতি চায় অ্যাপটি এতেই সন্দেহের দানা বাঁধে ব্যবহারকারীদের মনে’। ইংরেজিতে লেখা ওই লাইনটির বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, অ্যাপটি ফোনের নম্বর এবং আইডি সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারবে, এমনকি অন্য নম্বর থেকে আসা কোনো কলও যদি চালু থাকে।

এ ছাড়া শুধু লিখিত মেসেজ পাঠানোর এই অ্যাপটি ফোনে থাকা ভিডিও, অডিও ব্যবহারের অনুমতিও চেয়ে থাকে। যদিও অ্যাপটির মাধ্যমে ভিডিও বা অডিও তথ্য পাঠানোর কোনো অপশন দেখা যায়নি।

অ্যাপটির শর্তাবলির ঘরটিও ফাঁকা দেখা গেছে, যেখানে অ্যাপটি ব্যবহারের শর্তাসমূহ থাকার কথা। দুটি উপায়ে অ্যাপটিতে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। একটি ফেসবুক এবং অপরটি নিজের তথ্য দেয়ার মাধ্যমে। যদিও এর ওয়েব ইন্টারফেসে দেখা মেলেনি লগ-ইন করার কোনো অপশন।

উপরোক্ত বিষয়গুলোকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অ্যাপ ডেভেলপাররা। তাদের মতে, অ্যাপটি যে সব তথ্য জানতে অনুমতি চেয়ে থাকে তা সন্দেহজনক। অ্যাপটি প্রধান উদ্দেশ্য ব্যবহারকারীদের আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়া ও বিজ্ঞাপন থেকে আয় করা।

এই তথ্যগুলো পরবর্তীকালে বিক্রি করা ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা। অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপার মুমসাদ দিনুরি যুগান্তরকে বলেন, অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্যই তৈরি করা হয়। সাধারণ বার্তা পাঠানোর অ্যাপে এত পারমিশনের প্রয়োজন হয় না।

অ্যাপটি ব্যবহারের আগে সচেতন থাকা দরকার। এ ছাড়া ফিডনলি.কম নামে একটি সাইট এই স্টুলিশ অ্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত। ফিডনলি এই স্টুলিশের আইওএস ভার্সন। আরেক আইটি কর্মী তানজিমা পৃথ্বী বলেন, অ্যাপটিতে যেহেতু ফেসবুকের মাধ্যমে নিবন্ধন করা হয়।

এতে করে ফেসবুকের বিভিন্ন তথ্য অ্যাপটি হাতিয়ে নিতে পারে। তাই ফোনে অ্যাপটি ইন্সটল করলে তথ্যের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত অ্যাপটি আনইন্সটল করে ফেলা উচিত বলেও মনে করেন তানজিমা পৃথ্বী। গত বছর অ্যাপ স্টোর কিংবা গুগল প্লে, সর্বাধিক ডাউনলোড হওয়া অ্যাপের তালিকায় শীর্ষে ছিল সারাহাহ।

ধারণা করা হচ্ছে স্টুলিশ বা ফিডনলি সারাহাহকেও ছাড়িয়ে যাবে। তবে অভিজ্ঞরা বলছেন, গোপনে কিছু বলতে গিয়ে নিজের গোপন তথ্য এ সব অ্যাপস বা সেবায় না দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।