
নিজস্ব প্রতিনিধি : তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নে পিচের রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম হচ্ছে। এরকম সংবাদ বেশকিছু ধরেই বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আসার পরেও থেমে নেই কাজ। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পরেই দ্রুত তড়িঘরি করে কাজ শেষ করার পায়তারা করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সাংবাদিক তপন চক্রবর্তী। এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন ইতিমধ্যে এ প্রতিনিধির হাতে চলে এসেছে।

তথ্যসংগ্রহ কালে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর গত ৩০ জুনে রাস্তার অনিয়মের জন্য জানানো হয়। দরখাস্তে লেখা আছে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী প্রকৌশলী সাতক্ষীরাকে কয়েকবার মোবাইল ফোনে কাজটি দেখে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেও অদ্যবধি উক্ত কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে তদন্ত করতে যায়নি। এমন প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরার পক্ষে সহকারী কমিশনার লিখন বনিক তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ০৫.৪৪.৮৭০০.০১০.২৭.০০৬.২০-৩৯৩ স্মারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।
এরপর গত ২৫ অক্টোবর তারিখের ই.উ.ভূ,অ/নগরঘাটা/বিবিধ/৫১০-২০১৮/১৬৬ যুক্ত স্মারক নং সূত্রের মারফতে জানা গেছে, সহকারী কমিশনার (ভূমি), তালা বরাবর নগরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার গাইন একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ” নগরঘাটা গ্রামে পাকা পিচের রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম সংক্রান্ত তদন্ত দাখিল” করা হলো। এখানে জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরার স্মারক নং ০৫.৪৪.৮৭০০.০১০.২৭.০০৬.২০-৩৯৩ তাং ১৪.০৭.২০২০ খ্রিস্টাব্দ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি), তালা সাতক্ষীরা কার্যালয়ের স্মারক নং ৯৪৮ তারিখ ১৩.০৯.২০ খ্রিস্টাব্দ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নগরঘাটা বিপ্লবী পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক তরুন কুমার বিশ্বাস কর্তৃক নগরঘাটা গ্রামে পাকা পিচের রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম সংক্রান্ত আবেদন দাখিল করার ফলে আবেদনের তদন্তভার নগরঘাটা ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে তদন্ত করে অনিয়ম প্রমাণিত হয়।
পরিপত্রে লেখা আছে, তালা উপজেলার ২নং নগরঘাটা ইউনিয়নের নগরঘাটা গ্রামের উত্তরপ্রান্তের সরুলিয়া গামী রাস্তা হতে নগরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পূর্ব পার্শ্ব দিয়ে রহমাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সন্নিকটের অলি আহম্মেদের বাড়ি পর্যন্ত পিচের রাস্তা নির্মাণের কাজ অব্যহত রয়েছে। এ পর্যন্ত নির্মিত রাস্তা সরকারী প্রাক্কলন বরাদ্দের বিপরীতে সিডিউল অনুযায়ী বালু ভরাট ও মানসম্মত ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়নি মর্মে তদন্তকালে অভিযোগ করেন।

তদন্তকালে উত্থাপিত অভিযোগগুলো হলো, নগরঘাটা ঋষি পাড়ার সংযোগ সড়কে (চৌরাস্তা মোড়) মাটি খনন ও বালি না দিয়ে পূর্বের মাটির রাস্তার উপরে ইটের খোয়া দেয়া হয়েছে, নগরঘাটা ছোট কালিবাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বে মোহাম্মদ মোড়ল ও আজিজ সরদারের জমির পার্শ্ব বরাবর অত্যন্ত নিম্নমানের ইটের খোয়া দেয়া হয়েছে, নগরঘাটা বিপ্লবী পাঠাগারের পার্শ্বে মাটির রাস্তার উপরে ইটের খোয়া দেয়া হয়েছে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে রাস্তায় নিম্নমানের ইটের খোয়া দেয়া হয়েছে বিষয়গুলো উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এলজিইডি এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ রাস্তার কাজ হচ্ছে।
জনস্বার্থে আনিত অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রাক্কলন বরাদ্দের বিপরীতে ব্যবহৃদ ইটের গুনগত মান ও রাস্তার ধারণক্ষমতা যাচাই করে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক এ অভিযোগ নিষ্পত্তি অন্তে রাস্তা নির্মাণের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহন করা যেতে পারে।

গত ২৭ জুন ২০২০ তারিখে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় “নগরঘাটা কালিবাড়ি পাকা রাস্তা তৈরির শুরুতেই অনিয়ম” মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তথাপি অদ্যবদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতেই বোঝা যায় তালার এই ঠিকাদার সাংবাদিক তপন চক্রবর্তীর হাত কতটা বড়। নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করেই কাজ করলেও তাকে কেউ কিছু করার ক্ষমতা রাখেনা। যদি রাখতো তাহলে হয়তো প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট এলজিইডি কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন।
জনস্বার্থের এ কাজে এমন অনিয়ম হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের নীবর ভূমিকা এলাকার সাধারণ মানুষের মনে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে। তবে শুক্রবার থেকে তড়িঘরি করে কাজ শুরু করেছে এই রাস্তার। হয়তো ২/১ দিনের মধ্যে রাস্তায় পিচ দেওয়ার কাজ শেষ করে ফেলবে। তাই যাতে করে তড়িঘড়ি করে খারাপভাবে কাজ শেষ করতে না পারে সেব্যপারে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ এলাকার সুধি সমাজ।