জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আপিল শুনানিতে বক্তব্য রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চে শুরু হওয়া শুনানিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় এ দাবি জানান দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
দুদকের আইনজীবী বলেন, আসামিরা বিশ্বাস ভঙ্গ করে টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে টাকা উত্তোলন করেন। এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার মতো যুক্তি রয়েছে। প্রধান আসামিকে (খালেদা জিয়া) নারী ও অসুস্থ, বয়স বিবেচনায় দেওয়া হলো পাঁচ বছর, অথচ অন্য আসামিদের দেওয়া হয় ১০ বছর। এটা হতে পারে না। অথচ নিম্ন আদালতে কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখানো হয়নি।
খুরশিদ আলম বলেন, ‘বরং প্রধান আসামি হিসেবে খালেদা জিয়ার সাজা আরো বেশি হওয়ার কথা। নারী ও অসুস্থতা বিবেচনায় উনার শাস্তি কমানোর সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট বলেছে, চার মাসের জামিন দিলাম, এর মধ্যে আপিল তৈরি করতে হবে। আমার প্রশ্ন হলো, আপিল এর মধ্যে প্রায় তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তাই জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই। বরং আপিল শুনানি করে একসঙ্গে রায় ঘোষণা করা হোক।’
খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে দুদক আইনজীবী বলেন, পৃথক দুটি মামলায় দুই ব্যক্তির সাজা হয়। পরে হাইকোর্টে তাঁদের সাজা বৃদ্ধি করেন। একজনের এক বছর সাজা হয়, হাইকোর্ট তাঁকে তিন বছর করেন। আরেকজনের তিন বছর হয়, হাইকোর্ট তাঁর সাজা যাবজ্জীবন করেন। এভাবে কয়েকটি মামলার রেফারেন্স তুলে ধরে খালেদা জিয়াকে জামিন না দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরেন।
এরপর বেলা ১১টায় আপিল শুনানিতে আধা ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়।
একই মামলায় হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে পৃথক আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ আপিল শুনানিও হওয়ার কথা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিনের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি আজ সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে শুরু হয়।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে রয়েছেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল।
দুদকের পক্ষে খুরশিদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ সময় আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতিতে আদালত কক্ষ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
গত ১৯ মার্চ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন। একই সঙ্গে জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করে।
গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে পরের দিন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক আপিল করে। পরে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ জামিনের স্থগিতাদেশ দেন। পরদিন ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং আসামিদের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।