কয়রায় সেচের অভাবে অনাবাদী হাজার হাজার বিঘা জমি

প্রতি বছরই হাজার হাজার মণ ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত

25

ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা: খুলনার কয়রা উপজেলা প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। মাছ চাষের পাশাপাশি ধান চাষ এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপজীব্য উৎস। কিন্তু কৃষি প্রয়োজনীয় উপকরণ সহ সেচ ব্যবস্থা না থাকায় হাজার হাজার কৃষক একদিকে যেমন ফসল উৎপাদনে পিছিয়ে আছে, অন্যদিকে পতিত জমির সঠিক চাষের অভাবে মানুষের কাঙ্ক্ষিত খাদ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। সরকার ভিক্ষুক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করলেও এ অঞ্চলে রাস্তা ঘাটে ভিক্ষা বৃত্তির নানা বয়সের লোক চোখে পড়ে। অনাহারে অর্ধাহারে যাদের জীবন যাপন দারিদ্র্য সীমারেখা নিম্নস্তরে।

এ অঞ্চলে একটি ফসল আমন ধান চাষ যা নির্ভর করে বৃষ্টির পানির ওপরে। আবার বোরো মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার করতে দেখা যায় কৃষকদের। চার দিকে খাল বিল শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে। খাল, বিল, ডোবা-নালায় নেই পানি। পানি না থাকার কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ৫নং কয়রা সদর ইউনিয়ন, মহারাজপুর, আমাদী, মহেশ্বরীপুর সহ নোনা পানিতে ডুবন্ত দক্ষিণ বেদকাশি এলাকার কৃষকদের। অথচ ধান চাষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জীবন নির্বাহ জড়িয়ে আছে কয়রা সদর সহ মহারাজপুর ইউনিয়নের সহস্রাধিক কৃষক পরিবার।

মাটি এবং বালি ভরাট হয়ে ছোট ছোট খালসমূহ আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এছাড়া লিজ ও টেন্ডারের কারণে ইজারাদাররা যথেচ্ছা ব্যবহার করছে খাস খতিয়ান ভুক্ত খালগুলো। বিলসমূহ শুকিয়ে যাওয়া এবং সেচ ব্যবস্থা না থাকায় চলতি বোরো মৌসুমের বাম্পার ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার চাষীরা। ফলে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

ধান চাষ করে বছরের কয়েকটি মাস স্বভাবিক জীবন যাপন করলেও পানির অভাবে বোরো ধান চাষ না করতে পেরে, বাকি মাস গুলো সংসার চালানো দুরূহ হয়ে পড়ে।

খুলনার কয়রা উপজেলা ব্যবস্থা না থাকায় হাজার-হাজার বিঘা জমিতে আমন চাষের পরে রবি মৌসুমে হচ্ছেনা বোরো ধানের চাষ। বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে চাষীরা আমনের লাভজনক একটি ফসল পেলেও আম্পান, আইলা, সিডর ও বুলবুলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে প্রতি বছর একটি ফসল উৎপাদন করে যাচ্ছে। সেচ ব্যবস্থা না থাকায় চাষীরা অস্বচ্ছল হলে পড়েছে। দু’ফসলের জন্য জমি উপযোগী থাকলেও পানির সংকটের কারণে প্রতিবছরই হতাশ এঅঞ্চলের কৃষক শ্রেণি।

সরোজমিনে মহারাজপুর ইউনিয়নের বড় বিলের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এখানে চাষীরা বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে দুই ফসলি জমিতে আমনের একটি ফসল উৎপাদন করছে। অথচ সরকারি বা বেসরকারি কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কৃষি সেচ ব্যবস্থায়। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলীয় এঅঞ্চলে ধানের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এলাকায় যদি সরকারি ভাবে সেচ ব্যাবস্থা করা হয় তাহলে হতোদারিদ্র কৃষক রবি মৌসুমে ও ফসল উৎপাদন করে অর্থিক সচ্ছলতা ও স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে।
মহারাজপুর ইউনিয়নের বড় বিলের বাসিন্দা কৃষক রফিকুল বলেন, মহারাজপুর বড় বিলের সাথে ৫ বিঘা জমি নিয়ে মাছসহ ধান চাষকরে জীবিকা নির্বাহ করেন।কিন্তু বোরো মৌসুমে সেচ ব্যবস্থার অভাবে বোরো মৌসুমে ধান চাষ করতে না পারায় শুধু আমন চাষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করতে হয়। তিনি সরকারী বা বেসরকারী রফিকসহ হাজারও কৃষককে বাঁচাতে দ্রুত আধুনিক সেচ ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
মহারাজপুর ইউনিয়নেরবড় বিল এলাকার ,আইয়ুব,ছালাম,শফিক,কহিনুর, আসাদুলসহ শতাধিক কৃষক বলেন,আমন ধান চাষ করার পর সেচ ব্যবস্থা না থাকায় এক ফসলে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকার বা বেসরকারী ভাবে যদি আমাদের সেচ ব্যস্থার করতো তাহলে ২ ফসল ও বিভিন্ন সবজি লাগিয়ে পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিন্তে থাকতে পারতাম।

এ ব্যাপারে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু বলেন,মহারাজপুরের অধিকাংশ কৃষক আমাকে তাদের অসুবিধার কথা বলছেন। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কৃষকের সুবিধার্থে ও কৃষিকের মুখে হাসি ফোটাতে মহারাজপুর বিলে যাতে করে আধুনিক সেচ ব্যবস্থা স্থাপন করা যায় এব্যাবারে আমি বিভিন্ন মহলে কথা বলেছি। ইনশাআল্লাহ অতিদ্রুত আধুনিক সেচ ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম মিজান মাহমুদ জানান, পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা না থাকায় প্রতি বছর শুকনো মৌসুম তথা বোরো মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদী পড়ে থাকে।পর্যাপ্ত আধুনিক সেচের ব্যবস্থা করা হলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জমির আবাদ করা সম্ভব। এসব জমি থেকে হাজার হাজার মন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।