ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা প্রতিনিধি ।। করোনা ভাইরাসের অজুহাতে খুলার কয়রায় ‘ওয়ান টাইম প্লাস্টিক চায়ের কাপ ব্যবহার অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলাব্যাপী।
যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা অপচনশীল এসব কাপের জন্য বেড়েছে জলাবদ্ধতা। ঝুঁকি বেড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের। এ ছাড়া এগুলো পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব কাপে গরম চা খাওয়া কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে।প্লাস্টিকের এ কাপের ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন পরিবেশবাদীরা।কয়রার সচেতন মহল বলেন, এটি বিষ। পাশাপাশি ‘ওয়ান টাইমথ পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ‘বিসফেনল এথ ও নানা রাসায়নিক। আর এসব রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে প্রবেশ করে শরীরের ভারসাম্য নষ্টের পাশাপাশি কারণ হতে পারে ক্যান্সারেরও। বস্তুটি দেখতে যতটা সাদা, এর কাজ ততটাই কালো।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কয়রা উপজেলাজুড়ে ছোট-বড় প্রায় পাঁচ হাজার চায়ের দোকান আছে। এসব দোকানে প্রতিদিন প্রায় অর্ধ লাখ কাপ চা বিক্রি হয়। যার ৭০ শতাংশ চা প্লাস্টিকের ‘ওয়ান টাইমথ কাপে দেওয়া হয়। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে কথা হয় চায়ের দোকানি মনিরুল , দুঃখী,শামছুর, আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে । তাদের অভিযোগ, ক্রেতার চাহিদায় এ কাপে চা দিতে বাধ্য হন তারা। ব্যবহারের পর ওই কাপ যেখানে-সেখানে ফেলার বিষয় জানতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
কয়রা সদরের বাজারের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী তন্ময় জানান, প্রায় ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘ওয়ান টাইমথ প্লাস্টিক সামগ্রী বিক্রি করে। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার ‘ওয়ান টাইমথ প্লাস্টিকের চায়ের কাপসহ প্লেট বিক্রি হয়। প্রকারভেদে প্রতি পিস ৭০ পয়সা থেকে এক টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করা হয়।পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার জানান, প্লাস্টিক মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। অবিলম্বে এসব অপচনশীল প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।এ ছাড়া এগুলো পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.সুদীব বালা বলেন, প্লাস্টিক জাতীয় কাপে চা বা গরম পানি পান করলে হার্ট, কিডনি, লিভারসহ ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এসব পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পলিমার নামক ক্ষতিকর কেমিক্যাল। যা মানবদেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস জানান, পলি ইথায়লিন ও পলি প্রপাইলিন বা এর কোনো যৌগ মিশ্রণে তৈরি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (৬) এর ‘কথ ধারা লঙ্ঘন।
এসব পণ্য বিক্রি ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে দুই বছরের জেল, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে। অপচনশীল প্লাস্টিকের জন্ম হয় কিন্তু মৃত্যু হয় না প্লাস্টিকের পরিবর্তে মাটির অথবা কাচের তৈরি পণ্য ব্যবহার করা উত্তম। তিনি বলেন, তারা মাইকিংয়ের মাধ্যমে চা দোকানিদের এ ব্যাপারে সচেতন করছেন ও প্লাস্টিক কাপের ব্যবহার বন্ধে একটা নিদিষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। প্লাস্টিক ব্যবহাররোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।