কেশবপুরে সাগরদাঁড়ির মধুপল্লীর চার দেয়ালে বন্দি শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা

8

আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি:  সাগরদাঁড়ির মধুপল্লীর চার দেয়ালের ভেতর বন্দি হয়ে পড়েছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। খেলার মাঠ নেই। নেই সমাবেশের স্থান। মন ভরে কোন খেলাধুলা করা যায় না। গাছের ভেতর দাঁড়ায়ে সমাবেশে অংশ নিতে হয়। অবস্থা এখন এমন হয়েছে- যেন আমাদের সবকিছু বন্দি হয়ে পড়েছে মধুপল্লীর চার দেওয়ালের ভেতর। এ ভাবেই কথা গুলো জানায়, সাগরদাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিন সাগরদাঁড়ির মধুপল্লীর ভেতর ওই স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস শুরুর আগে সমাবেশ করা হচ্ছে গাছের ভেতরে। নেই কোন খেলার মাঠ। মন ভরে শিক্ষার্থীরা কোন খেলাধুলা করতে পারে না খোলা জায়গার অভাবে। এক তলা বিশিষ্ট ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়। স্কুলটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৮৮ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন। ভবনের ৪টি কক্ষে পাঠদান করানো হয়। বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকদের নাম করণে শ্রেণি কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ কক্ষে পঞ্চশ ও দ্বিতীয় শ্রেণি, নজরুল কক্ষে চতুর্থ ও শিশু, শরৎচন্দ্র কক্ষে তৃতীয় ও প্রথম শ্রেণির পাঠদান করানো হয়। মধুসূদন কক্ষটি শিক্ষকদের অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

TAIFUR-B

স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান, চতুর্থ শ্রেণির জয়কুন্ডু, তৃতীয় শ্রেণির প্রজ্ঞা, রাখি, তামিম, তন্দ্রা দাস, অন্তর, বীজয় হালদারের সাথে কথা হয়। স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলে, স্কুলের নেই কোন খেলার মাঠ। নেই সমাবেশের জায়গা। কোন খেলাধুলা করা যায় না। বল নিয়ে খেলতে গেলে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হতে হয়। শিক্ষার্থী প্রজ্ঞা, তামিম, জয় কুন্ডু বলে, তাদের শিক্ষা নিতে হয় মধুপল্লীর ভেতর থেকেই। শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলাসহ তাদের সব কিছুই যেন মধুপল্লীর চার দেয়ালের ভেতর বন্দি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা আর ভাল লাগে না। স্যারদের মুখ থেকে শুধু শুনি তাড়াতাড়ি স্কুল মধুপল্লীর বাইরে স্তানান্তরিত হবে। কিন্তু কবে হবে আর কবে আমরা মন ভরে খোলা জায়গায় খেলাধুলা করতে পারব তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
সাগরদাঁড়ি গ্রামের অধিবাসী মুফতি তাহেরুজ্জামান তাছু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মধুপল্লীর ভেতর শিশু শিক্ষার্থীরা শুধু শ্রেণি কক্ষে পড়াশুনা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। জায়গার অভাবে পারে না শিক্ষার্থীরা ধেলাধুলা করতে।

সাগরদাঁড়ির মধুসূদন একাডেমির পরিচালক মধুসূদন গবেষক কবি খসরু পারভেজ বলেন, শিক্ষার্থীদের মমন বিকাশে দ্রুত স্কুলটি মধুপল্লীর বাইরে স্থানান্তর করা উচিত।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন নেছা বলেন, স্কুলটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৮৮ জন। শিক্ষক আছেন ৮ জন। ভবনের ৪টি কক্ষে পাঠদান করানো হয়। বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকদের নাম করণে শ্রেণি কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলীদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। গত ১৫ ও ১৬ সালে পঞ্চম শ্রেণি সমাপনি পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। ১৭ সালে ৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। জায়গার অভাবে সমাবেশ করানো হয় মধুপল্লীর বিভিন্ন গাছের নিচে। শিক্ষার্থীরা ছুটাছুটির সময় প্রায়ই গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। স্কুলটি মধুপল্লীর বাইরে স্থানান্তর করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। মধুপল্লীতে নিয়োজিত প্রতœতত্ত¡ বিভাগের কাষ্টডিয়ান মহিদুল ইসলাম বলেন স্কুলের শিশুদের জন্য মধুপল্লীর গেট স্কুল চলা পর্যন্ত খুলে রাখা হয়। তারপরও স্কুলটি মধুপল্লীর বাইরে নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। স্কুলের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, স্কুলটির জন্য সাগরদাঁড়ি বাজারের পাশেই একটি জায়গার কথা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দ্রুত স্কুলটি পধুপল্লীর বাইরে স্থাপিত করতে পারলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আকবর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি মধুপল্লীর বাইরে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এব্যাপারে উপজেলা নির্বহী অফিসার মো. মিজানূর রহমান বলেন, ওই স্কুলটি মধুপল্লীর বাইরে স্থাপন করার জন্য ৩ বিঘা জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান আছে। অধিগ্রহণ শেষে স্কুলটি মধুপল্লীর বাইরে স্তানান্তর করা হবে।