কেশবপুরে বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান পর্যটকদের জন্য বাড়তি বিনোদন

1207

আজিজুর রহমান,কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি: কেশবপুরে বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান সব সব সময় পর্যটকদের জন্য বাড়তি বিনোদন যুগিয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে।যশোর জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের কেশবপুর উপজেলা সদরে বাস যোগে পৌছালে শহরেই দেখা মিলবে বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমানের। কালোমুখো হনুমানকে ঘিরে কেশবপুরের পৃথিবীর বুকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার বদৌলতে আজ সুপরিচিত জনপদের নাম। কিন্তু যাদের নিয়ে আজকের এ পরিচিতি সেই কালোমুখো হনুমানের দল আজ ভালো নেই। খাদ্য সংকটে পড়েছে তারা। তার পরও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীদের নিরন্তর বিনোদন দিয়ে চলেছে।তারা নিজ হাতে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে খাদ্য গ্রহন করে তাদের বিনোদনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। মানুষের সাথে এদের রয়েছে চরম সখ্যতা, খাদ্যের সন্ধানে এরা লোকালয়ে ঘুরে ফিরে মানুষের হাত থেকে খাদ্য চেয়ে নেওয়া, সুযোগ পেলে দোকান থেকে হাত বাড়িয়ে বিস্কুট, কলা, রুটি নিয়ে চলে যায়। তারপরও ব্যবসায়ীরা এদের উপর বিরক্ত হয় না।

উপজেলা বন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানাগেছে, কেশবপুরে সরকারি হিসেবে হনুমানের সংখ্যা সাড়ে ৩’শ। কিন্তু বাস্তবে সাড়ে ৫’শ’রও বেশী হনুমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসি ।এরা ১৩ থেকে ১৫ টি গ্রুপে ভাগ হয়ে বিচরণ করে থাকে। মানুষের সাথে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করে। তারা নিজ হাতে তাদেরকে বাদাম, বিস্কুট ও কলা খেতে দিয়ে আনন্দ পান। হনুমানের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা গ্রুপ ভিত্তিক চলাফেরা করে থাকে। একটি পুরুষ হনুমান এক একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় । দলের প্রধান পুরুষ হনুমান অত্যন্ত বদ-মেজাজি। দলের মধ্যে যদি কোন মা হনুমান পুরুষ বাচ্চা প্রসব করলে সে বাচ্চাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে ওই পুরুষ হনুমানটি। পুরুষ হনুমানটির ধারনা পুরুষ শাবকটি বড় হয়ে তার কতৃত্ব নিয়ে নিতে পারে, সে আশঙ্কায় এ ধরনের আচরণে করে থাকে দলনেতা। প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, এ প্রজাতি সাধারণত ৫ বছর বয়স থেকে ৬ মাস অন্তর বাচ্চা প্রসব করে থাকে।এদের গড় আয়ু ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এক একটির ওজন ৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। হাত ও পায়ের পাতা মুখের মতোই কালো। শরীরে ধূসর বর্নের রোম (লোম) দিয়ে আচ্ছাদিত।তবে পেটের দিকটা কিছুটা সাদা ও লালাভ।চলাফেরা করার সময় এরা লেজ উচু করে চলে।হনুমানেরা কেশবপুর শহরের ভিতর ও আশ-পশের গ্রামে স্বাভাবিক চলাফেরা করে থাকে।সরকারি ভাবে প্রতিদিন খাদ্য সরবরাহ করা হলেও বরাদ্দকৃত খাদ্য প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।সে জন্য খাদ্য অন্বেষণে দেশের বিভিন্নস্থানে চলে যাচ্ছে।হনুমানরা মানুষের মত বুদ্ধির সম্পন্ন প্রাণী।এক ব্যক্তি হনুমানের লেজে জখম করায় হনুমানদল ঐক্যবদ্ধ হয়ে থানা কর্তার বাসভবন ঘেরাও করে বিচার প্রার্থনা করে। সে ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করতে বাধ্য হয়। আটকের পর তারা থানা কম্পাউন্ড ত্যাগ করে তারা। কেশবপুরের বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত খাদ্য সঠিকভাবে বিতরণ করা হচ্ছে কিনা বা তাদের কোন সুবিধা-অসুবিধা দেখভালের জন্য রক্ষণাবেক্ষণে তদারকি কমিটি রয়েছে। যার নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন কেশবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।চলাফেরা করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত এরা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করছে।পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে কভারযুক্ত তার ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন সংগঠন থেকে বলা হলেও তারা করেনি। ফলে মারা যাচ্ছে বিরল প্রজাতির হনুমান। হনুমানদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা। পর্যাপ্ত খাদ্য ও বনাঞ্চলের অভাবে হনুমানদের গর্ভকালীন নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। এই বিরল প্রজাতির হনুমান রক্ষায় দ্রুত অভয় অরণ্য সৃষ্টির দাবী এই জনপদের মানুষের। এবিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, হনুমানদের জন্য সরকারিভাবে খাদ্য বরাদ্দ রয়েছে। মেয়াদ শেষ হলে জেলা প্রশাসন থেকে তাদের খাদ্য সরবরাহ করা হয়। ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট থেকে সরকারের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও ইকোটুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হনুমানের জন্য সরকারিভাবে খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।ইতোমধ্যে নিরাপদ বিচরণে তাদের জন্য অভয়ারণ্য সৃষ্টির কাজ চলছে।