মেডিকেল অফিসারের কক্ষ ২০ দিন ধরে তালাবদ্ধআজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি: চরম অবহেলা, উদাসীনতা, বদলী ও ছুটি জনিত কারণে কেশবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) না থাকায় ওই বিভাগের জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ও দীর্ঘ মেয়াদি পদ্ধতি গ্রহণ এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় ধস নেমেছে। এই বিভাগের ডাক্তার আব্দুল বারী বদলী ও ডা. তামান্না পারভীনের ছুটির কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেডিকেল অফিসারের কক্ষ গত ২০ দিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। যে কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, বদলী ঠেকাতে ডা: আব্দুল বারী ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে দেন দরবার করে চলেছেন। ডা. আব্দুল বারী স্বপদে বহাল থাকতে তাঁর অধীনস্থ কর্মচারীদের বাধ্য করছেন তার পক্ষে ঊধ্বর্তন মহলে আবেদন করাতে।
জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার ১৪৪ গ্রামসহ পাশ্ববর্তী মনিরামপুর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার আংশিক এলাকার মা ও শিশু রোগীরা প্রতিনিয়ত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবা গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু মেডিকেল অফিসারের কক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় তারা সেবা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেক রোগিকে দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে ভিড় করতে। এর আগে ডাক্তার আব্দুল বারী নিয়মিত অফিস না করে বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করাসহ নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও তিনি সে যাত্রায় ঊধ্বর্তন কর্তাদের ম্যানেজ করে পার পেয়ে যান। ফলে তিনি ৭ বছর ধরে এ উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মচারীরা জানান, এই বিভাগের মেডিকেল অফিসার (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) আব্দুল বারীর গত ২৩ জুলাই তাঁর বদলীর আদেশ হওয়ায় তিনি দেড় মাসের জন্যে ছুটির আবেদন করে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তার দপ্তরে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ সুযোগে তিনি স্বপদে বহাল থাকতে অধীনস্থ কর্মচারীদের বাধ্য করছেন তার পক্ষে ঊধ্বর্তন মহলে আবেদন করাতে। ডা. আব্দুল বারী ছুটির আবেদন করেও গত ৭ আগস্ট স্থায়ী ও দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণ ক্যাম্পেও কাজ করেছেন বলে অভিযোগ। ছুটির আবেদন করে তিনি প্রতিদিন কেশবপুরের বিভিন্ন ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনসহ অন্যান্য অপারেশন করে চলেছেন। অপরদিকে, অপর মেডিকেল অফিসার (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) ডা: তামান্না পারভীন কেশবপুর পরিবার পরিকল্পনা অফিসে দেড় বছর আগে যোগদান করলেও তিনি কখনও অফিস করেন না। ছুটি নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় এক বছর। এরপরও তিনি গত ১০ জুলাই থেকে পুনরায় ৩১ দিনের ছুটি কাটাচ্ছেন। যে কারণে ওই ডাক্তারদ্বয়ের কক্ষটি এখনও তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, ডা: আব্দুল বারী দীর্ঘ দিন ধরে মেডিকেল অফিসার (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) পদে কর্মরত থাকার সুবাদে তার উধ্বর্তন কর্তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। যে কারণে অফিস ফাঁকি দিয়ে তিনি কেশবপুরসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করে যাচ্ছেন। এছাড়া ডাক্তার বারীর বিরুদ্ধে গত ০২/১২/১৫ তারিখ কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের মেহেরপুর গ্রামের নাজমুল মোড়লের স্ত্রী আয়শা খাতুন আল্ট্রাসনোসহ অন্যান্য রিপোর্ট দেখাতে এসে এই ডাক্তারের লালসার শিকার হন। ডাক্তার তার অফিস রুমেই ওই মহিলার সাথে অনৈতিক কাজ করার চেষ্টা করলে মহিলা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও কোন সুবিচার পাননি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মহাপরিচালক উক্ত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত রিপোর্ট চাইলেও ডা: বারী তদন্ত অফিসারকে ম্যানেজ করে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করান। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসাররা (মা ও শিশু স্বাস্থ্য) কোথাও যোগদান করার পর তারা বদলী হন কিনা তা মানুষ জানেনা। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, মেডিকেল অফিসাররা কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত করে স্বপদে বহাল রয়েছেন। যে কারণে তারা ওই স্থানে প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করে আছেন। কেশবপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জানান, এ,সিআর ও সার্ভিস বুকে সমস্যা করতে পারে বলে বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার চপল সাহা ভয় দেখিয়ে অন্যান্য কর্মচারীদের ডাক্তার আব্দুল বারীকে স্বপদে বহাল রাখার আবেদনে স্বাক্ষর নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে ডাক্তার আব্দুল বারী বদলীর আদেশ ও দেড় মাসের ছুটির কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, আমি এখনও কেশবপুর থেকে ছাড়পত্র নেয়নি এবং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের অনুরোধে স্থায়ী ও দীর্ঘ মেয়াদি পদ্ধতি গ্রহণ ক্যাম্পে কাজ করছি। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, ডাক্তার আব্দুল বারীর ভাষ্যমতে তিনি ছুটিতে আছেন। তবে গত ৭ আগস্ট তিনি স্থায়ী পদ্ধতি ক্যাম্প করেছেন। আর ডাক্তার তামান্না পারভীন রয়েছেন ছুটিতে। কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শেখ আবু শাহিন বলেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আলাদা কোন জায়গা না থাকায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের কয়েকটি রুম নিয়ে তাদের সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন। তবে ডাক্তার আব্দুল বারীর কক্ষটি বেশ কয়েক দিন বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে যশোর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডাক্তার মুন্সি মনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুল বারীর বদলীর আদেশের পর তিনি দেড় মাসের ছুটির আবেদন করেছেন। যা উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা: শরিফুল ইসলাম বলেন, কেশবপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যশোরের উপপরিচালক লিখিতভাবে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।