কেশবপুরে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা

15

আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি:  কেশবপুরে কুকুরের কামড়ে আহতদের নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত ছয় মাসে বিভিন্ন সময়ে কুকুরের কামড়ে উপজেলার ২৯২ জন আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনা বিভিন্ন প্রত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তদন্ত টিম গঠন করা হয়। এ তদন্ত টিম শনিবার সকাল থেকে কুকুরে কামনাড়ো ব্যক্তিদের বাড়িতে যেয়ে তদন্ত করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার শেখ আবু শাহীন জানান, গত ২৯ জুন বিভিন্ন এলাকার ২৫ জনকে কুকুরে কামড়ালে আহতরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা নেয় এ খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে এই তদন্ত টিম গঠন হয় এবং তারা কেশবপুরে আসেন।

গত শনিবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত টিম আক্রান্তদের বাড়িতে যেয়ে তাদের খোঁজ খবর নেন, স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় করেন। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তদন্ত টিমের প্রধান ডাক্তার ইকরামুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন প্রত্রিকার খবরের ভিত্তিতে সরেজমিন তদন্ত করার জন্য রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখাকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন।

সে মোতাবেক আমরা রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তদন্ত কমিটি কেশবপুরে তদন্ত করতে এসেছি। তিনি বলেন, আক্রান্তদের সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়েছে। আমরা প্রতিটি রোগির খোঁজ খবর নিয়েছি। তারা সুস্থ রয়েছে। কেশবপুরে প্রচুর হনুমান ও কুকুর থাকার কারনে এখানকার জনগোষ্টি ঘাতকব্যাধি জলাতঙ্ক রোগের ঝুঁকিতে বসবাস করছে।

এমতাবস্তায় এখানে পর্যাপ্ত পরিমানে সরকারিভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্টির বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে আগামি দিনে নিয়মিত মাসিক চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন সরবরাহের চেষ্টা করা হবে। স্থানীয় জনগনের দাবিতে আগামি দিনে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করার আশ্বাস দেন। তদন্ত কমিটির সাথে মতবিনিময়ের সময় উপস্থিত ছিলেন যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার দিলীপ কুমার রায়, হাসপাতাল কর্মকর্তা ডাক্তার শেখ আবু শাহিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তদন্ত কমিটির প্রধান ডাক্তার ইকরামুল হক, কমিটির অন্য সদস্য ডাক্তার ফজলে রাব্বী, ডাক্তার নিজামুল ইসলাম, কেশবপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফ-উজ-জামান খান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসাইন, সাংবাদিক কবির হোসেন প্রমুখ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাঃ উম্মে রোমান সিদ্দিকী শাম্মী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন এবং আমাকে খোঁজ খবর নিয়ে তাঁকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমি কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও এবং যশোরের সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলেছি। একজন মানুষকে কুকুরে কামড় দিলে চিকিৎসার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে গাইড লাইন রয়েছে তার মধ্যে কাপড় কাচা সাবান পানি দিয়ে ওয়াশ করতে হবে, সেটা করা হয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী রোগীকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এআরভি ভ্যাকছিন পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে।

সরকারীভাবে সকল রোগীকে এআরভি দেয়া হয়েছে, ভ্যাকসিনটি চার ডোজ দিতে হয় সেটাও সরকারীভাবে পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে। যাদের রক্ত বের হয়েছে ক্ষতস্থান থেকে তাদের এআরভি’র সাথে ওজন অনুযায়ী আরআইজি দিতে হবে। আর আইজি সরকারীভাবে দেয়া হয় না, প্রত্যেক রোগীকে বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়েছে। অনেকে দিয়েছেন অনেকে দেন নি। ওটা না দিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, উপযুক্ত রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এই ভ্যাকসিন উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ দেয়া হয় না। তারপরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের নির্দেশে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভ্যাকসিনের চাহিদা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীরা সবধরণের সেবা পেতে পারেন তার সুব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।