কেশবপুরে এক যুবককে পিটিয়ে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের পর আসল তথ্য ফাঁস

23
কেশবপুর

আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি : কেশবপুরে এক যুবক অপরের স্ত্রীকে ভাল বেসে বিয়ে করার অপরাধে তার স্ত্রী ও স্ত্রীর পূর্বের স্বামী ওই যুবককে পিটিয়ে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় ২৪ সেপ্টেম্বর একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আসল কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। এদিকে কামরুল সরদার মোবাইল ফোনে আব্দুল্লাহ আহাদের পিতা মুক্তিযোদ্ধা উকিল উদ্দিন শেখ ও তার ছেলে সালাম শেখকে জীবননাশের হুমকী দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে সাহশ পাচ্ছেনা। কামরুল সরদারের হুমকীর কারণে আহাদের পরিবারের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

আব্দুল্লাহ আহাদকে প্রথমে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রবিবার সকালে কাশিয়ানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ আহাদ এখন ওই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আব্দুল্লাহ আহাদের পিতা মুক্তিযোদ্ধা উকিল উদ্দিন শেখ ও তার মা পারুল বেগম জানান, গত ১০ বছর আগে আমি উপজেলার বাউশলা গ্রামে শ্বশুর মৃত কাদের সরদারের বাড়িতে বসবাস করতাম। তার কিছুদিন পর হঠাৎ এক দিন গভীর রাতে আমার সালা সামাদ সরদার আমাকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করে। ওই দিন রাতেই আমি শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি। তারা আরও বলেন, সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার তেলকূপ গ্রামে মৃত আয়ূব আলী শেখের মেয়ে আছি খাতুন (২৫) এর সঙ্গে আমার ছেলে আব্দুল্লাহ আহাদের বিয়ে হয়। এর ৩ বছর পর তাদের ঔরষে একটি ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। গত মে মাসে আমাদের আছি খাতুনকে ঔষধের সঙ্গে বিষক্রিয়া দিয়ে মেরেফেলে। তার ১ সপ্তাহ পর আছি খাতুনের সন্তান ইউসুপ (২) একই ভাবে আমার সালা সামাদ মেরে ফেলে। আমার শ্বশুর বাড়িতে বসত ঘর ছিল। সে ঘরটিও ভেঙ্গে দেওয়া হয়। উকিল উদ্দীণ শেখ আরও জানান, আমার স্ত্রী পারুল বেগমের নামে তার পিতার বাড়িতে জমি রয়েছে। তারই জের ধরে কামরুল সরদার মুক্তা বেগম, তার মা আলজিরা বেগম, লালপুর গ্রামের ভ্যান চালক আরশাদ আলি সরদার বাউশলা গ্রামের সামাদ সরদার মিলে আমার ছেলে আব্দুল্লাহ আহাদকে পিটিয়ে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালায়।

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি পিংগুলিয়া ভাটাপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা উকিল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ আহাদ (৩০) সাংবাদিকদের জানান, আমি উপজেলার বাউশলা গ্রামে মামা সামাদ সরদারের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি। আমি গত কয়েক মাস আগে কাজের সন্ধানে উপজেলা লালপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ সরদারের ছেলে কামরুল সরদারের সঙ্গে আমি খুলনা গল্লা মারিতে রিক্সা চালাতাম। এর কিছুদিন পর সাতক্ষীরা জেলার হরীদাসপুর গ্রামের বাহার আলী সরদারের মেয়ে মুক্তা বেগম (২৪) এর সাথে কামরুল সরদারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের স্বামী-স্ত্রী সাথে আমার গভীর সম্পর্ক গোড়ে উঠে। সেই থেকে দুজন দুজনকে ভালবেসে ফেলি। এভাবে চলতে থাকে আমাদের ফোন আলাপ। এর কিছুদিন পর মুক্তা বেগম আমাকে মুঠোফোনে বলেন আমাকে বিবাহ করতে হবে। তার কথা মতো আমি মুক্তা বেগমকে বিবাহ করি। এইভাবে চলতে থাকে আমাদের সংসার।

তার কিছুদিন পর আমি ও আমার স্ত্রী মুক্তা বেগম গোপালগঞ্জে পিতার বাড়িতে চলে যায়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বাউশলা গ্রামে মামা সামাদের বাড়িতে আমি ও আমার স্ত্রী আসার সাথে সাথে কামরুল আমাকে মুঠোফোনে ডাকেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ওইদিন বিকালে মঙ্গলকোট বাজারে আসা মাত্রই কামরুল সরদার মুক্তা বেগম, তার মা আলজিরা বেগম, লালপুর গ্রামের ভ্যান চালক আরশাদ আলি সরদার বাউশলা গ্রামের সামাদ সরদার মিলে আমাকে পিটিয়ে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালায়। দ্রুত বাজারের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। আব্দুল্লাহ আহাদের পরিবার তাদের ভয়ে দপ্তরে অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছে না। এই ব্যাপারে কামরুল সরদারের মুঠোফোনে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার ফোন দেওয়া হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে সামাদের মুঠোফনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তাদের মা ছেলেকে ঔষধ দ্বারা মেরে ফেলিনি। মা ছেলে ২ জনই হার্ট ব্লক হয়ে মারা যান। আমার বোনাই উকিল উদ্দীন শেখকে গলা টিপে ধরে হত্যার কোন প্রশ্নই উঠেনা। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার বোনাই আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।