কবিরাজের কেরামতিতে দু’চোখের আলো হারালো ১৭ মাসের শিশু

29
যশোরে জ্বীন তাড়াতে
যশোর জেলা-যুগান্তর

যশোরের মনিরামপুরে ভূয়া কবিরাজের কেরামতিতে দু’চোখের আলো হারালো ১৭ মাসের শিশু মাছুম বিল্লাহ। জ্বীন তাড়ানোর নামে ঝাড়ফুঁক দেয়াসহ চোখের মধ্যে বিষাক্ত গাছের রস দেয়ায় শিশুর দু’চোখ অন্ধ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে পৌর এলাকার তাহেরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, মাছুম বিল্লাহর পিতা পৌর এলাকার তাহেরপুর গ্রামের আকরাম মোড় নামক স্থানের শরিফুল ইসলাম। তিনি ক্যান্সারে মারা যাবার পর থেকে শিশুকে নানী মরিয়ম বেগম ও মা সোনিয়া খাতুন দেখভাল করে আসছেন। মাস খানেক আগে মাছুম জ্বরে আক্রান্ত হয়। ভয় পেয়ে জ্বর হয়েছে কি-না এ জন্য পার্শ্ববর্তী কাশিপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ গোলদারের পুত্র কথিত কবিরাজ মুনসুর আলীকে খবর দেন।

কবিরাজ শিশুকে দেখে জানান, নিজ এলাকায় তার চিকিৎসা করা যাবে না, তাকে (শিশু) দাদার বাড়ি উপজেলার জালালপুর গ্রামে নিয়ে যেতে বলা হয়।

শিশুর নানী মরিয়ম জানায়, কবিরাজের কথামতে শিশুকে জালালপুর গ্রামে নেয়া হয়। এসময় শিশুর শরীরে ঝাঁড়-ফুঁক দেয়াসহ চোখের মধ্যে তরল রস দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পর মাছুম দু’চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না বলে জানান নানী মরিয়ম।

এরপর থেকে ওই কবিরাজকে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। হঠাৎ শুক্রবার রাতে পৌর শহরের রাজগঞ্জ মোড়ের পাশে ট্রেকার স্ট্যান্ডে অনেক মানুষের ভীড়ে কবিরাজ মুনসুরকে পাকড়াও করে বাড়িতে নিয়ে আটক রাখার পর পুলিশে দিতে প্রস্তুতি নেয়া হয়।

খবর পেয়ে কবিরাজের পরিবারসহ একটি চক্র আকরাম মোড়ে আসে। এ সময় শিশুর দু’চোখ ভালো করতে যত টাকা লাগবে তা বহন করার মৌখিক আশ্বাস দিয়ে কবিরাজকে মুক্ত করে নিয়ে যায়। ওই কবিরাজ এ পর্যন্ত ভুক্তভোগী দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরপরও কবিরাজের দাবি ছিল একটি ছাগল ও এক মন চাল।

এছাড়া কয়েক মাস আগে জ্বীনে ধরেছে বলে ভয় দেখিয়ে তা তাড়ানোর কথা বলে পৌর এলাকার তাহেরপুর গ্রামের দরিদ্র আব্দুল্লাহ ও ফতেমা খাতুনের নব-পুত্রবধূর হাত ও পা ভেঙ্গে ফেলে কথিত কবিরাজ মুনসুর। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে দিতে চাইলে একই চক্রের মাধ্যমে জরিমানা দিয়ে রক্ষা পায়।

এসব ঘটনায় কবিরাজ ও দরবেশ দাবিদার মুনসুরের কঠোর শাস্তির জন্য র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী।