কক্সবাজারে বিরল রোগে আক্রান্ত দুই সহোদর

27
লাল সবুজের কথা

মোঃ তারেকুর রহমান আজাদ ,কক্সবাজারঃ  মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য কথাটি এক নিঃশ্বাসে শেষ হয়ে গেলেও এর ব্যাখ্যা ও সঠিক বাস্তবায়ন অনেক কঠিন। মানুষের বিপদের সময় পাশে থেকে সহযোগিতা করাই মানুষের পরম ধর্ম হওয়া উচিত। একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে যদি একটি প্রাণ বাঁচে, একজন মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখে; তাতেই হয়তো জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। সহায়-সম্বলহীন বাবা-মায়ের সন্তান রাকিবুল হাসান (৯) ও শাকিবুল হাসান (৩)। বয়স অনুযায়ী তাদের দেখতে শিশুর মতো হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তারা তা নয়।

শিশুর দুটির এই অবস্থার কথা প্রথমে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রথমে তুলে আনেন ফারহানা ইসলাম সুমি। তিনি লিখেন, ‘শিশু’ শব্দটা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে প্রাণবন্ত নাদুসনুদুস একটা বাচ্চার চেহারা ভেসে উঠে। কিন্তু সেই নাদুসনুদুস টা যদি হয় শিশুর অসুস্থতা তবে সেটা খুবেই বেদনাদায়ক। (genetic disorder ) এটা জিন ঘটিত রোগের নাম।

এই বাচ্চা দুইটি (genetic disorder) ভোগছে। বড় জন রাকিবুল হাসান (৯), ছোটজন শাকিবুল হাসান (৩)। মা রুবিনা আক্তার রুপা, বাবা আবুল বশর (৪২) দিনমজুর, কক্সবাজার শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের বাসিন্দা ওরা। বাবা বশরের কাছে ওদের ভরণপোষণ রীতিমত কষ্টসাধ্য। দেখতে প্রাপ্ত বয়স্ক মনে হলে ও রাকিবুল হাসান আসলে ক্লাস টুতে পড়ে। শাকিবুল হাসান এখনো স্কুল এ যায় না।। রাকিব, সাকিব সবার ভালবাসা চাই। ওরা বেড়ে উঠুক প্রাণবন্ত একটা শৈশব আর স্বাভাবিক সুন্দর জীবন নিয়ে।

এই সূত্র ধরে এই প্রতিবেদক শহরের এন্ডারসন রোডস্থ খালেক চেয়ারম্যান এর শাপলা নিবাস কলোনীর বাসিন্দা গরীব ফেরীওয়ালা আবুল বশর ও গৃহিনী রুবিনা আক্তারের বাসায় উপস্থিত হই। দেখা মিলে তাদের সন্তান রাকিবুল হাসান ও শাকিবুল হাসানের। বিস্তারিত আলাপের পর জানা গেল, পাড়ার আর পাঁচটা শিশুদের মতো খেলতে পারে না মন ভরে, হাসতে পারে না প্রাণখুলে। চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ তাদের কচি জীবন। কারণ তারা দুই ভাই দীর্ঘদিন বিরল রোগে আক্রান্ত। তবে ধারণা করা হচ্ছে তারা হরমোন জনিত সমস্যায় ভোগছে। তাদের শরীরের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে।

আবুল বশর বলেন, জন্মের পর থেকে ৩ মাস অন্তর অন্তর দুই ভাইয়ের শরীর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হতে থাকে। বর্তমানে ৯ বছর বয়সী রাকিবুল হাসানের ওজন প্রায় ৮৫ কেজি এবং ৩ বছর বয়সী শাকিবুল হাসানের ওজন ২৫ কেজি।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মেডিকেলের একাধিক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিলেও সন্তানদের রোগের কোন সমাধান পায়নি অসহায় পরিবার।

গরম এবং শীত এর মধ্যে কোন সময়টিতে তারা একটু স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে এমন প্রশ্নের জবাবে বাবা আবুল বশর বলেন, শীতে তাদের বুকে ঠান্ডা লেগে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয় ও বুক ব্যথা হয়ে যায়, আর গরমে সারা শরীর ঘেমে ভিজে যায়। আমি গরীব মানুষ। ফুটপাতে সামান্য ফেরি করে সংসার চালায়। যেদিন ক্রেতা সংকট হয় সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়। এর মধ্যে আবার আমার ছেলে দু’টির এত বড় সমস্যা।
কান্না জড়িত কণ্ঠে আবুল বশর জানান, ‘চিকিৎসক বলেছেন, পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে আমার রাকিব ও শাকিবকে। তবে এর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন, যা আমার পক্ষে যোগাড় করা অসম্ভব। টাকা যোগাড় করার কোন পথও দেখছি না আমি। আর চিকিৎসা না হলে আমার সন্তানদের হয়তো বাঁচাতে পারবো না।’

তিনি আরও বলেন, বাবার সামনে যদি সন্তানরা স্কুল-মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা, খেলাধুলা ও ভালোভাবে চলাফেরা করতে না পারে তাহলে একজন বাবা হয়ে তা কীভাবে সহ্য করবো আমি? সন্তানদের এমন পরিণতিতে বাবা-মায়ের মনে কোন শান্তি থাকতে পারে? আমার শেষ সম্বল যা ছিল তা দিয়ে আমি আমার সন্তানদের সুস্থ করে তুলতে চেষ্টা করেছি কিন্তু তাতে কোন কাজ হয় নি। বর্তমানে আমার অবস্থা খুবই খারাপ। শুধুমাত্র টাকার জন্যই আমি কিছু করতে পারছি না বলে কান্না স্বরে আর্তনাদ করেন আবুল বশর।

এব্যাপারে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, শিশু দুটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।