এরা আসে মধু খেতে, এখনই বিদায় করুন

18

বিশেষ প্রতিনিধি: মামলা থেকে রেহাই পেতে অনেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এরা (অনুপ্রবেশকারী) আসে মধু খেতে।

কেউ যদি তাদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, তাদের এখনই বিদায় করেন। কারণ তারা দুঃসময়ে থাকবে না। ’ দলীয় নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘অনেকেই আসবে, আপনাদের মধ্যে কোন্দল করে খুন করবে; নাম হবে দলের, যে দলের নেতাকর্মীরা খুন করেছে। ’ গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গণভবনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল ছিল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সভার শুরুতে দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘণ্টার দিকনির্দেশনামূলক বক্তৃতা দেন তিনি। এরপর আট বিভাগ

থেকে আটজন নেতা মাঠপর্যায়ে দলের অবস্থা এবং সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বক্তৃতা দেন। বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা ‘সুবিধাভোগীদের’ তৎপরতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পরাজয়ের আশঙ্কাও করেন তাঁরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সার্ভে আমরা পুরো বাংলাদেশে করেছি, কাদের কাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে আর কারা আমার দলে আছে সেই তালিকা আমার কাছে আছে। আমি বলব, এরা আপনার সঙ্গে থাকতে আসেনি, আপনার জন্য কাজ করতে আসেনি। আর যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, ভাবে যে এখানে (আওয়ামী লীগ) এলে মামলা থেকে বাঁচতে পারবে। আর আসে কারা? যারা মনে করে ক্ষমতার সঙ্গে থাকতে পারলেই তো পয়সা বানাতে পারব। ’

নিজের দল ভারী করতে অন্য দলের নেতাকর্মীদের না ভেড়ানোর নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন অনেকেই আসবে। আমি আরেকটা সার্ভে করে বের করছি, যেহেতু আমরা ক্ষমতায় তাই বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে আসতে অনেকেই ছুটে আসে। আর গ্রুপ করার জন্য কোনো বাছবিচার নেই, যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়ে নিজের শক্তি দেখাতে চায়। ’ তিনি বলেন, ‘এটা মনে করবেন, আপনার দলের (আওয়ামী লীগের) লোক আপন না, বাইরের লোক আপন হয়ে গেছে; সে কিন্তু আপন হবে না। নিজের যারা তাদের চিনতে হবে। আওয়ামী লীগ সম্পদ গড়ার জন্য না, আওয়ামী লীগ জনগণের ভাগ্য গড়ার জন্য। ’

তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলীয় প্রধান বলেন, জনগণের মন জয় করেই নির্বাচনে জেতার প্রস্তুতি নিতে হবে। ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি নয়, জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনিই হবেন প্রকৃত নেতা। তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে কেউ আওয়ামী লীগের বদনাম করলে সে আর আওয়ামী লীগ করতে পারবে না। যাকে নৌকা মার্কা দেওয়া হবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হবে।

দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার পাশাপাশি ত্যাগের মনোভাব নিয়ে নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে আপনাকে আপনার কাজে খুশি হয়ে ভোট দেবে। আমরা ভোট চুরির বদনাম নিতে চাই না। জনগণের মন জয় করেই নির্বাচনে জিততে হবে, ক্ষমতায় আসতে হবে। ক্ষমতায় আসতে হবে এ জন্য যে আমরা জনগণকে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত করে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজ করছি সে লক্ষ্য পূরণ করতে। ’

বিএনপি গঠনতান্ত্রিকভাবে দুর্নীতিকে গ্রহণ করেছে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি গঠনতান্ত্রিকভাবে দুর্নীতিকে দলের নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। দুর্নীতিকেই তারা তাদের গঠনতন্ত্রে নিয়ে এসেছে। তাদের নীতিটাই হচ্ছে এটা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা। তিনি বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্রে ছিল—কেউ যদি দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে চেয়ারপারসন হতে পারবে না। তারা এই গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে দুর্নীতিবাজকে রাখতে সেই ব্যবস্থা করেছে। এর মাধ্যমে নিজেরাই স্বীকার করেছে, তাদের দলটি দুর্নীতির দল। এ ধরনের দুর্নীতির দল ক্ষমতায় থেকে দেশের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। ’

দলকে বদনামে ফেললে মেনে নেব না : শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রার্থী হয়ে গেছেন। তাঁরা প্রার্থী হয়ে বিএনপি কী সন্ত্রাস করল, দুর্নীতি করল, লুটপাট করল, সেটা বলেন না। তাঁদের বক্তব্য আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে, সংগঠনের বিরুদ্ধে। প্রার্থী হওয়ার অধিকার সকলেরই আছে। কিন্তু সে প্রার্থী হতে যেয়ে আমার দলকে বদনামে ফেলবে, কোনো মতেই এটা আমি মেনে নেব না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। যে উন্নয়নের কাজগুলো করছি সেগুলো না বলে, সেগুলো ভুলিয়ে দিয়ে কার বিরুদ্ধে কী দোষ আছে, সেইটা খুঁজে জনগণের কাছে যাঁরা বলবেন, তাঁরা কখনো আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবেন না। ’

কর্মীদের মূল্যায়নের ওপর মনোনয়ন : আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের ওপর আগামী দিনে দলীয় মনোনয়ন নির্ভর করবে। তিনি বলেন, ‘আপনারা নমিনেশন পাবেন কী পাবেন না তা নির্ভর করে এলাকায় আপনারা কতটুকু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের কতটুকু মূল্যায়ন করেছেন, সেটা আমি বিবেচনা করে দেখব। ’

দলীয় এমপিদের প্রতি সতর্কবার্তা : দলীয় এমপিদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যাঁরা সংসদ সদস্য তাঁদের আমি বলব, একটা কথা মনে রাখবেন, জনগণ কিন্তু খুব হিসাবি। কে দুর্নীতি করল, জনগণ কিন্তু সেটা মাথায় রাখে। কাজ করতে গেলে টাকা নিলে, এরপর ভোট চাইতে গেলে বলবে, টাকা দিয়ে কাজ নিসি, ভোট দেব কেন?’

মহাজোট থাকবে : শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মহাজোট করেছি নির্বাচনের স্বার্থে, আগামী দিনেও করব, আমরা বন্ধু হারাব না। ’ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জানতেন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে এবং পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না—এ কারণে অনেক প্রস্তুতি প্রয়োজন। সে কারণে তিনি লন্ডনে বসে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু সেসব বিষয় তখন মুখে বলেননি। তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। ৭ই মার্চের ভাষণে তিনি গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ’

সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তব্য দেন। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির সদস্য, দলীয় সংসদ সদস্য, মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ চার হাজারের বেশি প্রতিনিধি সভায় অংশ নেন।