খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোর্ট মুক্তি না দিলে আমি কি জেলের তালা ভেঙে তাকে নিয়ে আসবো? তিনি বলেন, ‘উনার মুক্তি চাইতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাক।’
বুধবার (৩০ মে) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সংবিধান সম্মতভাবেই হবে। নির্বাচন আমি করবো না, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলা আছে, সেভাবেই হবে।’ ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচন ঠেকানোর নামে যারা জ্বালাও-পোড়াও করেছে, তা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অপকর্ম যারা করেছে, তারা নির্বাচনে আসলো কী আসলো না, এটা নিয়ে এত হা-হুতাশ কেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোর্ট মুক্তি না দিলে আমি কি জেলের তালা ভেঙে তাকে নিয়ে আসবো?’ তিনি বলেন, ‘উনার মুক্তি চাইতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাক। তিনি মুক্তি না দিলে আমাদের ওপর দোষ দিতে পারে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতিমের টাকা মেরে খাওয়ায় মামলা হয়েছে, আমি তো মামলা দেইনি। মামলা দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১০ বছর মামলা চলার পরে রায় হয়েছে।’
আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি
সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযোনে মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আপনারাই পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন এই মাদকের বিরুদ্ধে। কোনটা চান? অভিযানটা চলুক, না বন্ধ হয়ে যাক? ১০ হাজারের ওপরে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে। মাদক যারা পাচার করে, তাদের ধরতে গিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু ঘটতে পারে। আইনগত দিক থেকে এটা ঠিক না, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন একটা অপারেশনে যায়, তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যায়ভাবে যদি কেউ কিছু করে থাকে, সেটার কিন্তু বিচার হয়। আপনারা একটা ঘটনা দেখান যে, একজন নিরীহ মানুষ শিকার হয়েছে। একটা অভিযান করতে গেলে, একটা ঘটনা ঘটলে যদি সেটাকে বড় করে দেখান, তাহলে কি অভিযানটা বন্ধ করে দেবো? আজ সারাদেশের ঘরে ঘরে হাহাকার— এই মাদকের জন্য। তার বিরুদ্ধে অপারেশন করা যাবে না? এই ধরনের একটা অভিযান করতে গেলে দু/একটি ঘটনা ঘটতেই পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কাকে গড ফাদার বলছেন, সেটা আমি জানি না। যারা জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দারা দীর্ঘ দিন যাবত এটা নিয়ে কাজ করেছে। হঠাৎ করে এ অভিযান শুরু হয়নি।’
চলমান মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি। মাদকের কোনও গডফাদারই ছাড় পাবে না। সে যে বাহিনীরই হোক না কেন।’ তিনি বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে নিরীহরা মরছে না। দীর্ঘদিন থেকে নজরে রাখা হয়েছে মাদক পাচার ও চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িতের। মূলত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
কোনও নিরীহ মানুষ মরছে না
মাদকের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাদকের কারণে সমাজে আজ হাহাকার বইছে। মাদকের কারণে ছেলের হাতে বাবা, মেয়ের হাতে মা খুন হচ্ছেন। মাদক নিয়ে মিডিয়াও তো তোলপাড়। তাহলে, আজ অভিযান নিয়ে কেন এমন বিরোধিতা হচ্ছে।’
অভিযানে কোনও নিরীহ মানুষ মরছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। আত্মরক্ষার অধিকার সবারই আছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্দুকযুদ্ধে কেউ মারা গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরই-বা কী করার আছে।’
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলার সময়েই অনেকে বিরোধিতা করেছিলেন। সমালোচনা করেছিলেন।’ সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারাই পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন এই মাদকের বিরুদ্ধে। কোনটা চান? অভিযানটা চলুক না বন্ধ হয়ে যাক? ১০ হাজারের ওপর এপর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে। মাদক যারা পাচার করে, তাদের ধরতে গিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু ঘটতে পারে। আইনগত দিক থেকে এটা ঠিক না, কিন্তু একটা অপারেশনে গেলে তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যায়ভাবে যদি কেউ কিছু করে থাকে, সেটার কিন্তু বিচার হয়। আপনারা একটা ঘটনা দেখান যে, একজন নিরীহ মানুষ শিকার হয়েছে। একটা অভিযান করতে গেলে, একটা ঘটনা ঘটলে যদি সেটাকে বড় করে দেখান, তাহলে কি অভিযানটা বন্ধ করে দেবো? আজ সারাদেশের ঘরে ঘরে হাহাকার এই মাদকের জন্য। তার বিরুদ্ধে অপারেশন করা যাবে না?’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যৌথ নদী কমিশন আছে, তারা আলাপ-আলোচনা করছে। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের বিষয়ে তারা আশ্বাস দিয়েছে।’
আরেক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য কোনও খরচ করতে চাই না। কেউ যদি পয়সা-পাতি দেন তাহলে দেন, দেশের মানুষকে বিলিয়ে দেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো অনেক বোঝে, তাহলে আর বলার দরকার নাই। তারাও তো কম যায় নাই। খালেদা জিয়া কি ভারতে যায় নাই? জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করার দুই বছরের মধ্যেই ভারতে গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল? সেটা বিএনপিকে জিজ্ঞেস করেন, ক্ষমতা দখল করেই ভারত গিয়েছিল। বিএনপি এখন তিস্তার পানির কথা বলে। বিএনপি নেতাদের কি মনে নাই, উনাদের নেত্রী ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলে গিয়েছিলেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত আমাকে ক্ষমতায় আনবে কী আনবে না, সেটা জানি না। ২০০১ সালে আমেরিকান কোম্পানি এখানে গ্যাস উত্তোলন করেছিল এখানে, আমি কিন্তু রাজি হইনি। খালেদা জিয়া লিখে দিয়ে এসেছিল। আমি বলেছিলাম— গ্যাসের মালিক এ দেশের জনগণ।মুচলেকা লিখে দিলো গ্যাস বিক্রি করবে ক্ষমতা এলে। আমি শুধু বললাম— আল্লাহ্ মন বুঝে ধন দেয়।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক বালতি পানি রিজভীকে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। একজনকে দায়িত্ব দাও, ওকে কয়েক বোতল পানি পাঠিয়ে দিক। রোজার মাস, কাজে লাগবে। আমি মুচলেকা দেওয়ার দলের নই। কারও কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার কম।বিন্দু বিন্দু থেকেই সিন্ধু তৈরি হয়। তারা ছোট ছোট দল এক হচ্ছে, এটা তো ভালো।’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পান্থপথ কিন্তু একটা খাল, ভবিষ্যতে যদি ক্ষমতায় আসতে পারি, ওই রাস্তাগুলোর ওপরে বক্স কালভার্ট ভেঙে দিয়ে খালের ওপর দিয়ে রাস্তা করে দেবো।’
আমি কোনও প্রতিদান চাই না
‘ক্ষমতায় আসতে নরেন্দ্র মোদির কাছে প্রতিদান চান শেখ হাসিনা’ ভারতের একটি দৈনিকের এই খবরের বরাতে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনও প্রতিদান চাই না। তাদেরকে (ভারত) অনেক দিয়েছি। আমার দেওয়ার পরিমাণ বেশি, নেওয়ার পরিমাণ কম। ভারতের উত্তর-পূর্বে সন্ত্রাস বন্ধ হয়েছে। ভারত এটি বুঝতে পারে এখন। কিন্তু তার বিনিময়ে কোনও প্রতিদান চাই না।’
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এখন কেন পানি ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে?
তিস্তার পানি প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিস্তা ব্যারেজ কেন নির্মাণ করা হলো? ব্যারেজ করে কেন এখন পানি ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে? আগের সরকারগুলোর কাছে এর জবাব কী?
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তার পানি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা এ নিয়ে আলোচনা করছে। আমি নিজের প্রতি ভরসা রাখি। প্রতিটি নদী খনন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও একটি বিষয় নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে সমস্যা থাকতেই পারে। তাই বলে বারবার একই বিষয় তুলে দু’দেশের মধ্যেকার সম্পর্কে তিক্ততা আনতে চাই না।’
এদের মুখে ভোটের কথা শুনলে, পাগলেও হাসবে
বদু (বদরুদ্দোজা চৌধুরী) কাকার কি মনে নাই জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা নিয়েছিলেন, তখন যে হ্যা/না ভোট দিয়েছিলেন, সেই নির্বাচনটা উনি কেমন দেখেছিলেন? এদের মুখে ভোটের কথা শুনলে, পাগলেও হাসবে।’