আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু বিষয়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আছেন।
শনিবার ভোররাতে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রোববার সকাল পৌনে আটটার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে বিএসএমএমইউ’র কার্ডিয়াক বিভাগে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
বিএসএমএমইউ’র আইসিইউ প্রধান ডা. ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো।
বিএসএমএমইউ’র ভিসি কনক কান্তি বড়ুয়া এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। রক্তচাপসহ অন্যান্য সবদিকে অবস্থা উন্নতির পথে। তবে এখনো শ্বাষকষ্ট থাকায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা তার অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ব্রিফিংয়ের পর জানান, বিএসএমএমইউ’তেই সব আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ওবায়দুল কাদেরের পরিবার অন্য কোথাও নিতে না চাইলে তাকে এখানেই রাখা হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল কবির শামীম চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সাধারণ সম্পাদকের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়া হবে কি হবে না তা নেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
তবে দলের পক্ষ থেকে তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল ইস্যুতে ডাক্তারই বলবেন। আমাদের দলের পক্ষ থেকে ওনাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ করছি। আশা করছি তাকে শিগগিরেই সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে পারব।
রিং পরানো হয়েছে
এনজিওগ্রামের রিপোর্টে কাদেরের হৃদপিণ্ডে তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ডা. কামরুল হুদা। হার্টে রিং বা করোনারি স্ট্যান্ট পরানোর বিষয়ে বিএসএমএমইউ’র ভিসিসহ গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের আলোচনা শেষে আপাতত একটি রিং পরানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তিনি।
এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রোববার সকাল ১০টার কিছুক্ষণ আগে কার্ডিয়াক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্ব তার হৃদনালিতে স্ট্যান্ট পরানো হয়।
ওবায়দুল কাদের ১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৩ জুন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই দিনে যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন তিনি।
তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০২ সালের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন থেকে ২০০৯ সালের সম্মেলন পর্যন্ত কাদের আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৯ মার্চ জরুরি বিধিতে গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন জেলে ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্ত হন।
ওবায়দুল কাদের ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালে দলের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
২০১৬’র ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে কাদের ২০১৬-২০১৯ মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০১৫ সালের ২৮ নভেম্বর বঙ্গভবনে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। বর্তমানে তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী হিবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কিছুদিনের জন্য রেলমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।