“অরক্ষিত সুন্দরবন”   হুমকিতে জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় অঞ্চল

147

অাশা ইসলাম: ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে সুন্দরবনের আয়তন। দিন দিন বিলুপ্তি ঘটছে বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বৃক্ষ,উদ্ভিদ,পশু,পাখি,জীবজন্তু। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নদ নদীর প্রবাহ। বদলে যাচ্ছে বনাঞ্চলের বৈচিত্র্য ও জলবায়ূ। বার বার ধেয়ে আসছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর এ সব কিছুই মানব সৃষ্ট।
সুন্দরবন বাংলাদেশের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত। অতিতে ঘুর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো নানা দুর্যোগে উপকূলের মানুষকে সুরক্ষা দিয়েছে এ বন।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন ছিলো বর্তমানের দ্বিগুণ। সেসময় বিশাল এ বন নিয়ন্ত্রণ করতেন তদানীন্তন স্থানীয় জমিদার।
১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্ব অর্জন করে ও অর্ধশতাব্দী পর একে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করে।
বাংলাদেশ ও ভারত ভূখন্ড জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবন। সুন্দরবনের কিয়দংশ ভারতে এবং সিংহভাগ বাংলাদেশে। বাংলাদেশ ভূখন্ডের আয়তন ৫৫ লাখ ৭ হাজার ২৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৫ হাজার ৬০০ হেক্টরজুড়ে রয়েছে নদীনালা,খাল,মোহনা। বাকি ৪০ লাখ হেক্টরে বিস্তৃত বিশাল বনাঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপর লিলাভূমি এ বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান উদ্ভিদ,বৃক্ষ। পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও মায়াবী চিত্রা হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্য পশুর আবাস্থল এ সুন্দরবন। এছাড়া সুন্দরবনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ,পাখি,সাপ।
আর সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার পাঁচ-ছয় লাখ পেশাজীবী মানুষ এ বনের প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। জীবন জীবিকার তাগিদে এসব পেশাজীবী মানুষকে সুন্দরবনে অনুপ্রবেশ করতে হচ্ছে। অনুপ্রবেশ কারিরা বনাঞ্চল উজাড় করছে,নিধন করছে বন্যপ্রাণী। কেটে নিচ্ছে মূল্যবান গাছ। চোরা শিকারিরা বাঘ,হরিণ,কুমির,মাছসহ সুন্দরবনের অমূল্য সম্পদ পাচার করে দিচ্ছে অর্থের লোভে। বনবিভাগের সহায়তায় ডাকাত ও চোরা শিকারিরা সুন্দরবন লুটপাট করছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া বন লুটপাটের সাথে জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক,জনপ্রতিনিধি,পুলিশসহ উপকূল এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ।
এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে সুন্দরবন। আর ২০৫০ সালের মধ্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সাথে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের এক-তৃতীয় অংশ পানিতে তলিয়ে যাবে। এমনই মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা।