অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ১৭ মে দায়িত্ব নেবেন তাপস

23
অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ১৭ মে দায়িত্ব নেবেন তাপস

অনলাইন ডেস্ক: গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আগামী ১৭ মে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। ১৬ মে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের দায়িত্ব শেষ হবে। নতুন নির্বাচিত মেয়র তাপসকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বিদায় নেবেন সাঈদ খোকন।

তবে ডিএসসিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানে বড় ধরনের কোনো জমায়েত হবে না। সাদামাটাভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছোটখাট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দায়িত্ব হস্থান্তর করা হবে।

ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দ্বিতীয় নির্বাচিত মেয়র। ইতোমধ্যে তিনি শপথও নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন। তবে সাঈদ খোকনের মেয়াদ শেষ না হওয়ায় সাড়ে তিনমাস অপেক্ষা করতে হলো তাপসকে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আগামী ১৭ মে নবনির্বাচিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্বগ্রহণ করবেন।

তিনি বলেন, দায়িত্ব হস্তান্তরের অনুষ্ঠান সম্পর্কে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমার মনে হয়, করোনার কারণে বড় কোনো জমায়েত হবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছোটখাট অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর হতে পারে।

মেয়র সাঈদ খোকনের একান্ত সচিব (উপসচিব) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ১৭ মে দায়িত্বগ্রহণ করবেন। তবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাঈদ খোকন মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করার পর ডিএসসিসির প্রথম বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছরের ১৬ মে। তাই ২০২০ সালের ১৬ মে’র পরে সাঈদ খোকনের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে তিনি আর ওই চেয়ারে থাকতে পারবেন না। তার স্থলাভিষিক্ত হবেন নবনির্বাচত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ব্যক্তিগত মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর তারেক শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, আগামী ১৭ মে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি প্রস্তুতি নিয়েছেন। কীভাবে কাজ করবেন ইতোমধ্যে সে বিষয়ে তিনি কিছু পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছেন। চেয়ারে বসার পর থেকেই সেগুলো বাস্তবায়ন শুরু করবেন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে তাপস মোট ভোটারের ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশের সমর্থন নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগে তার নির্বাচনী ইশতেহারে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রতিটি নির্বাচনী সভায় তিনি জোরালোভাবে এই পাঁচ প্রতিশ্রুতির কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলছেন, এই নগর বাঁচাতেই এসব পরিকল্পনা তার।

প্রতিটি অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভায় শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, সময় হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর, নতুন পথে যাত্রা শুরু করার। ঢাকার উন্নয়নের জন্য এখন দরকার সঠিক নেতৃত্ব। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে, অনেক অবহেলা, গাফিলতিতে ঢাকা অপরিকল্পিত নগরী হয়ে গেছে। দূষণে আক্রান্ত নগরী হয়ে গেছে। ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। মেয়র হলে তিনি কী কী করবেন, তা-তুলে ধরেছেন তার পাঁচ পরিকল্পনায়। সেগুলো হলো-

১. ঐতিহ্য রক্ষা

তাপস ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘অনেক শহর মাত্র একটি নদীর অববাহিকায় তৈরি। অথচ দুটি নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা ঢাকাকে বাঁচিয়ে তুলতে পারছি না। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রেখেই নগরকে নতুন করে সাজানো হবে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সারাবিশ্বের কাছে তুলে ধরা হবে।’ তিনি বলেন, উন্নত বাংলাদেশের জন্য উন্নত রাজধানী দরকার। তাই উন্নত ঢাকা গড়তে নবযাত্রা শুরু করা দরকার।

২. সুন্দর ঢাকা

উড়োজাহাজ থেকে ঢাকা শহরের দিকে তাকালে শুধু বাক্স বাক্স ভবন দেখা যায়। এ নগরকে সবুজময় করতে হবে। তাপসের পরিকল্পনা, প্রতি ওয়ার্ডে মাঠ, খেলার জন্য উন্মুক্ত স্থান নিশ্চিত করবেন। অনেক মাঠ বিভিন্ন কাবের দখলে। সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিন বা সময়ের জন্য ক্লাবের দখলে থাকা মাঠ এলাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।

৩. সচল ঢাকা

আজ ঢাকা প্রায় অচল। শুধু মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক দিয়ে এর সমাধান হবে না; লাগবে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। পুরো যোগাযোগ ও পরিবহনব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করে ঢেলে সাজানো হবে। কিছু রাস্তা থাকবে, যেখানে শুধু হাঁটার ব্যবস্থা থাকবে। কিছু রাস্তায় শুধু ঘোড়ার গাড়ি চলবে। নাগরিকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ থাকবে। কোন রাস্তা বা পরিবহন ব্যবহার করবে, সে সিদ্ধান্ত নেবেন নাগরিকেরা। নগরবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করে এসব বিষয়ে পরিকল্পনা নেয়া হবে-বলেছেন শেখ ফজলে নূর তাপস।

৪. সুশাসনের ঢাকা

শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই দুঃখ করে বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় যায়? এ দুঃখ দূর করতে দেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গড়ে তুলবেন তিনি। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নাগরিকদের সব মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন তাপস। পুরান ঢাকার পঞ্চায়েত বিচারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কথাও বলছেন তিনি। তিনি নির্বাচিত হলে বছরের ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘণ্টা নগর ভবন খোলা রাখার ব্যবস্থা করবেন। জাতীয় রাজনীতিবিদ বা মন্ত্রী-সাংসদদের জন্য নয়, প্রতিটি নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে নগর ভবনের দরজা।

৫. উন্নত ঢাকা

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেছেন, ৩০ বছরের মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হবে। তবে ২০৪১ এর মধ্যে অধিকাংশ কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকবে। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নিয়ে নেয়া কোনো প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি মেয়র হলে নতুন করে নেয়া প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দেন বিভিন্ন মতবিনিময় সভায়।